ঢাকার রাজধানী গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর তার মা মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যু হয়। চিকিৎসায় প্রথমত গাফিরতি ছিলো ডাঃ সংযুক্তা সাহার এমনটাই দাবি করলেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ এ টি এম নজরুল ইসলাম।
মাহবুবা রহমান (আঁখির) মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে ‘ভুল স্বীকার’ করেন হাসপাতালটির উপপরিচালক। তিনি বলেন, আঁখির চিকিৎসায় প্রথম গাফিলতি ছিল ডা. সংযুক্তা সাহার। পাশাপাশি যারা অস্ত্রোপচার করেছেন, তাদের অবহেলা ছিল।
কারণ, ওই সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। গাফিলতি ছিল হাসপাতাল কতৃপক্ষেরও।
উপপরিচালক, ডাঃ নজরুল ইসলাম।
এরই মধ্যে ডাঃ সংযুক্তা সাহাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন আঁখির সহপাঠীরাসহ দেশের জনসাধারণ। একই সঙ্গে তারা সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের দাবিও জানান।
গতকাল রোববার (১৮ই জুন) আঁখির মৃত্যুর পর তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনও ডাঃ সংযুক্তা সাহা ও হাসপাতালকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী-সন্তান মারা যায়নি, তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমার স্ত্রী ডাঃ সংযুক্তা সাহার ভিডিও দেখে নরমাল ডেলিভারি করাতে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসে। যদিও কুমিল্লার ডাক্তার বলেছিল তার সিজার লাগবে। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে আমি প্রতারিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ভুল চিকিৎসায় জড়িত সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রত্যেকের বিচার চাই। সংযুক্তা সাহাও কোনভাবে সেই দায় এড়াতে পারেন না।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার ফেসবুকে নরমাল ডেলিভারির তথ্য পেয়ে গত ৯ই জুন আঁখিকে কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রালে আনা হয়। কিন্তু তার অধীনে ভর্তি করা হলেও অস্ত্রোপচারের সময় তিনি সেখানে ছিলেন না।
তখন তিনি বিদেশে যাচ্ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য গোপন রাখে। পরে অস্ত্রোপচার করেন অন্য চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবকালে আঁখির মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেছেন আখিঁর পরিবার ও সহপাঠিরা।
মলদ্বার কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে পরের দিনই আঁখিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আর জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরই মারা যায় নবজাতক শিশু। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। সেখানেই আট দিন চিকিৎসাধীন থেকে গতকাল আঁখির মূত্যু হয়।
ডাঃ সংযুক্তা সাহা, সেন্ট্রাল হসঃ
মাহবুবা রহমান (আঁখির) মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতলে নেওয়া হয় গতকাল। তবে নানা প্রক্রিয়া বাকি থাকায় ওই দিন তার ময়নাতদন্ত হয়নি। আজ আঁখির ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
আঁখির ভুল চিকিৎসা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর হাসপাতালটির দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযানে নামে। এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি পায় তারা। ফলে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ও সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখাসহ সাতটি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে, আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে আবারও আইসিইউ চালু করেছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।