মোঃ এনামুল হক, ডাঃ মঈন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ছিলেন দীর্ঘদিন।এরপর ২০১৭ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দক্ষিন সুরমা থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের তার এক সহকর্মী ডা. সাঈদ এনাম লিখেন,আমি গত ডিসেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাই। আজ গরীবের ডাক্তারদের কে যেনো গরীবের মতই মরতে হচ্ছে নেই তাদের নিরাপত্তা.অথচ এরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার আমাদের জীবনকে সুস্থ করে তুলছে.
স্মৃতি খুব কষ্টের, মঈন স্যারের ইন্টার্ন ছিলাম, ইন্টার্নশিপ শেষ হলে স্যার যে হাসপাতালে চেম্বার করতেন ঐ হাসপাতালে ডিউটি ডক্টর ছিলাম। একদিন রাত ২টায় এক রোগী ভর্তি হলো প্রচন্ড খিচুনি নিয়ে।
রিসিভ করেই স্যারকে ফোন দিলাম, স্যার ফোন ধরেই বললেন” ফজলুর আমিতো প্রায় বাসায় চলে আসছি,ম্যানেজ করতে পারবা না? আমি আমতা আমতা করে বললাম, স্যার ডায়াজিপাম দিয়েছি,রোগীটা খারাপ এখনও খিচুনি হচ্ছে দেখে গেলে ভালো হত স্যার।
স্যার ওভার ফোনে কি কি করতে হবে কিছুক্ষণ বললেন, তারপর হঠাৎ বলে বসলেন ঠিক আছে ফজলুর তুমি ফোন রাখ আমি আসছি। দশমিনিটের ভিতরে স্যার চলে আসলেন।এসেই বললেন যেহেতু ডায়াজিপাম দিয়ে ফেলেছো এখন আমাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নেক্সট স্টেপে যেতে হবে।
স্যার ১৫ মিনিট রোগীর পাশে অপেক্ষা করলেন তারপর বললেন, এখন ফসফেন লোডিং শুরু করো।রোগিটা গরিব ছিল স্যার নিজে থেকে যাবতীয় পরীক্ষার ৫০% কমানোর জন্য স্লিপে সাইন করলেন।
ডাঃ মঈন উদ্দিন চোধুরী তার স্ত্রী ও দুই সন্তান
পরে যাওয়ার সময় আমাকে বললেন শোন,” পার্টি গরীব, আমার ভিজিট তোলার দরকার নাই, ফ্রী করে দিও আর সকালে পেশেন্ট স্টেবল হলে ওসমানীতে রেফার্ড করে দিও, আজ আমার ইউনিটে ভর্তি আছে,এখানে এরা হসপিটালের বিল দিতে পারবে না”।এই ছিলেন আমাদের মঈন স্যার।
আসুন মেডিসিনে FCPS ও কার্ডিওলজিতে MD করা এই ডাক্তারকে আমাদের রাষ্ট্র কি দিয়েছে দেখি,
করোনাতে আক্রান্ত হয়ে স্যার যখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন সিলেটে, একসময় ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে স্যার এই রাষ্ট্রের কাছে একটি এয়ার এম্বুলেন্স চেয়েছিলেন, রাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে স্যার এয়ার এম্বুলেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না, আমার সদাহাস্যজ্বল স্যার তারপর অনুনয় করে রাষ্ট্রের কাছে একটি আইসিউ এম্বুলেন্স চেয়েছিলেন, রাষ্ট্র কর্নপাতই করেনি।
অবশেষে স্যার নিজ উদ্যোগে একটি সাধারণ এম্বুলেন্সে কুর্মিটোলা হাসপাতালে রেফার হলেন এবং আজ সকালে রাষ্ট্রকে সকল দায়ভার থেকে মুক্তি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
নাহ্,রাষ্ট্র কিছুই হারায়নি শুধু আমরা চিকিৎসকরা হারিয়েছি এফসিপিএস ও এমডি কমপ্লিট করা মানবিক একজন স্যারকে।
আজ চিকিৎসকদের প্রতি কেনো এতো অবহেলা?
প্রণোদনা চাইনা, চিকিৎসা করতে গিয়ে অসুস্থ হলে আমরাও স্বাস্থ্যকর্মীরা ( ডাঃ, নার্স, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারী) ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু পাবো, শুধু সরকারের কাছে এই নিশ্চয়তা চাই,,,,
আজ বাংলাদেশে কান্নার সুরে বলছে কিভাবে ভালো থাকি আমি. আমার ছেলে গুলো যে আজ ভালো নেই………