পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা শহর, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণা। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন এই শহর এখন ফুটপাত দখলের করাল গ্রাসে জর্জরিত। প্রায় ৬.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত দখল করে চলছে অবৈধ ব্যবসা, আর পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন মূল সড়ক ধরে চলাচল করতে। শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে ফুটপাত যেন পরিণত হয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যকেন্দ্রে, অথচ প্রশাসনের অবস্থান নীরব দর্শকের মতো।
অবৈধ দখলের ‘সোনার খনি’—ফুটপাত!
শহরের পশ্চিমবাজার, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, সাইফুর রহমান সড়ক, আদালত সড়ক, শমসেরনগর সড়ক, টিসি মার্কেট এলাকা, কুসুমভাগ, বেড়ীরপার, সদর হাসপাতাল ও শ্রীমঙ্গল সড়ক—এসব জায়গায় নজর দিলেই বোঝা যায়, ফুটপাত এখন আর পথচারীদের জন্য নয়, বরং তা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। মার্কেট ও ভবন মালিকরা নিজ ইচ্ছেমতো ফুটপাত ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা কামাচ্ছেন। ফল, শাক-সবজি, কাপড় থেকে শুরু করে বিস্কুট, পানীয়—সবই বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতজুড়ে।
নগদ টাকা, কাগুজে রসিদ—ব্যবসা জমজমাট!
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুসুমভাগ থেকে পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের ফুটপাতে শতাধিক ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়িতে বসানো হয়েছে দোকান। সন্ধ্যার পর ব্যবসা চরমে পৌঁছায়, পথচারীরা বাধ্য হন মূল সড়ক ব্যবহার করতে।
এতসব বাণিজ্যের ‘অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক’ হলো পৌরসভা। শহরের ফুটপাত থেকে সপ্তাহে দুই দিন—সোমবার ও বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫০-২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। পৌরসভা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, শুধু নভেম্বরেই কুসুমভাগ এলাকার ফুটপাত থেকে পৌরসভা আয় করেছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা! অথচ এই অর্থ ফুটপাত উচ্ছেদে ব্যবহারের বদলে কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
সাবেক মেয়রের আমল থেকে চলে আসা বাণিজ্য!
সূত্র বলছে, এই ফুটপাত দখল বাণিজ্য নতুন কিছু নয়। সাবেক মেয়র ফজলুর রহমানের সময় থেকেই অর্থ আদায়ের এই চক্র চলছে। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ ছিল এই অবৈধ আদায়। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে ফুটপাত বাণিজ্য, যা এখনো চলছে।
পথচারীরা বিপাকে, প্রশাসনের আশ্বাস!
স্থানীয় ফল বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, “আমরা প্রতি সপ্তাহে ২০০ টাকা করে দেই। এটা না দিলে ব্যবসা করা যাবে না।” তার মতো আরও শতাধিক ব্যবসায়ী একই অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ জানান, “ফুটপাত থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে খুব শিগগিরই ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে? নাকি ফুটপাত দখলের এই ‘স্বর্ণখনি’ থেকে অর্থ আদায়ের খেলা চলতেই থাকবে?