মৌলভীবাজার শহরের পাশেই শেরপুর এলাকা। সারাদিন ব্যস্ততা থাকলেও গভীর রাতে সেখানে নামে এক নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতা চিৎকার করে ভেঙে দেয় ২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা ১০ মিনিটে।
সিরাজুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক প্রবাসী পরিবারের ঘরে ঢুকে পড়ে ৬-৭ জনের এক মুখোশধারী সশস্ত্র ডাকাত দল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে তারা লুট করে নেয় ২৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৬ লক্ষ ৯ হাজার টাকা।
পরিবারের শিশুরা তখন কাঁপছিল, নারী সদস্যদের মুখে তখন শুধু প্রার্থনা।
ডাকাতির ধরন ছিল পরিকল্পিত, হাইড্রোলিক কাটার দিয়ে তালা ভেঙে প্রবেশ, এবং মুখে মুখে নির্দেশ—”একটাও শব্দ করিস না, গুলি খাবি!”
ঘটনার পর সকালে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
রুদ্ধশ্বাস তদন্ত: একটার পর একটা মুখোশ খুলে দিল পুলিশ!
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ তখন শুরু করে চৌকস অভিযান।
পুলিশ সুপার জনাব এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম এর নেতৃত্বে গঠিত হয় একাধিক টিম। দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) নোবেল চাকমা, পিপিএম কে।
পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য রায়হান মিয়াকে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে একে একে ধরা পড়ে পুরো চক্র।
গ্রেপ্তারকৃতরা: ভয়ংকর অতীত, ভয়ংকর স্বীকারোক্তি
১. আক্কুল মিয়া (৪০) – শ্রীমঙ্গল; ১০টির বেশি মামলার পলাতক আসামি
২. মনর মিয়া (৩৫) – রাজনগর
৩. অফাজ মিয়া (৩২) – শ্রীমঙ্গল
৪. অশোক কুমার দে (৫০) – স্বর্ণ ব্যবসায়ী, ডাকাতদের কাছ থেকে চোরাই মাল কিনতেন
৫. তোফায়েল আহমদ তোফা (৩৮) – হবিগঞ্জ সদর; একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি
৬. দিনেশ কর্মকার (৪৮) – চোরাই স্বর্ণ বিক্রেতা
৭. রায়হান মিয়া (৩০) – কুলাউড়া
উদ্ধার করা হলো: ভয়ংকর অস্ত্র ও ডাকাতির মালামাল -২টি দেশীয় পাইপগান, ৬ রাউন্ড গুলি, হাইড্রোলিক তালা কাটার যন্ত্র, ১টি প্রাইভেট কার, ১টি মোটরসাইকেল, ৮ লক্ষ ৬ হাজার ৯৮২ টাকা, ৪ ভরি ৭ আনা স্বর্ণালংকার, ডাকাতির সময় ব্যবহৃত মুখোশ ও সরঞ্জাম।
পুলিশের ব্রিফিং: “মৌলভীবাজারে আর কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই”
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা জানান, “এই ডাকাত দলের সদস্যরা আন্তঃজেলা অপরাধ চক্রের সদস্য। এরা পরিকল্পিতভাবে ডাকাতির টার্গেট নির্ধারণ করে। আমরা কঠোর নজরদারি ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের চিহ্নিত করেছি।”
তিনি আরও জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা পূর্বে ২১ এপ্রিল খলিলপুরের বাগারাই গ্রামের প্রবাসী আব্দুর রহিমের বাড়িতেও একইভাবে ডাকাতি করেছে।
আটকদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান দুই আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
জনমনে স্বস্তি, পুলিশের পক্ষে বাহবা। শহরের বাসিন্দারা বলছেন, “এতো বড় ঘটনার দ্রুত উদ্ঘাটন করায় আমরা পুলিশকে স্যালুট জানাই। আগে এমন ঘটনার বিচার মিলতো না, এখন আমরা আশ্বস্ত।”