পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পাল্টা হামলা চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেনাদের নাস্তানাবুদ করে দেয় পাকিস্তান। এরমাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে । বুধবার (১৪ মে) ভারতের বিরুদ্ধে অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুসে অংশ নেওয়া সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাসে যান শাহবাজ।
এই অপারেশন পাকিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলেও জানান শাহবাজ।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সেনারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দ্রুত জবাব দিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে।”
শেহবাজের সঙ্গে শিয়ালকোটে উপস্থিত ছিলেন- উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী আহসান ইকবাল এবং তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। এছাড়াও সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইতিহাস টেনে ভারতের প্রতি কড়া বার্তা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
ওই বছরের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে শেষ হয়। এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের হামলার জবাবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশ নেয়।
এই প্রেক্ষাপট টেনে শেহবাজ সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইতিহাস চিরকাল মনে রাখবে— কীভাবে পাকিস্তানের রক্ষীরা ভারতের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।” সেনানিবাসে বক্তব্যকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, “বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে কারা মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এখন তারাই বালুচ লিবারেশন আর্মি (বেলুচিস্তান স্বাধীনতাপন্থি গোষ্ঠী) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে (পাকিস্তান সরকারবিরোধী গোষ্ঠী) সমর্থন দিচ্ছে। যা মোদির কাছ থেকে আসছে।”
তিনি আরো বলেন, “মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানে বিভক্তির আগুন জ্বালানো মোদির আমাদের সন্ত্রাসবাদের উপর বক্তৃতা দেওয়া উচিত নয়।
সন্ত্রাসবাদের কারণে আমরা ৯০,০০০ এরও বেশি বেসামরিক লোকের হতাহত এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদি আপনার জ্বালাময়ী বক্তব্য আপনার কাছে রাখুন। পাকিস্তান এ অঞ্চলে শান্তি চায়। কিন্তু আমাদের শান্তি চাওয়ার বিষয়টিকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমরা শান্তির জন্য প্রস্তুত এবং আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। পছন্দ আপনার।”
পাকিস্তানে ভারতের পানি প্রবাহের হুমকির জবাবে শাহবাজ বলেন, “যদি ভারত পাকিস্তানে পানি বন্ধ করার চিন্তা করে। তাহলে জেনে রাখুন: পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। এটি আমাদের সীমারেখা যেটিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এরপর আবারো মোদিকে উদ্দেশ্য করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদি, আপনি যদি আরেকবার কোনো আগ্রাসন দেখান। তাহলে আপনারা ধারণার বাইরের পরিণতি ভোগ করবেন।”
ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আলোচনার দরজা খুলে দিয়ে শাহবাজ শরীফ বলেন, “কোনো সংলাপ একতরফা হতে পারে না। ভারতের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য হবে না যদি না এটি একটি বিস্তৃত সংলাপের অংশ হয়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীর এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং এটি অবশ্যই সমাধান করা উচিত।”