এবার জেন জি ঝড় বইতে শুরু করেছে ভারতেও। চীন সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল লাদাখে ফুঁসে ওঠা এ বিক্ষোভ ভয়াবহ রক্তপাতের জন্ম দিয়েছে। জেন জি বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ চলছে। ‘থ্রি ইডিয়টস’র রেঞ্চোখ্যাত সোনম ওয়াংচুককে বলা হচ্ছে জেন জি নেতা। তার অনশনের প্রতি সমর্থন জানাতে বুধবার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে আসেন। তিনি একজন জলবায়ুকর্মী ও সমাজকর্মী।
সাংবিধানিক সুরক্ষা ও রাজ্য মর্যাদার দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজনের প্রাণ গেছে। এরই মধ্যে সহিংস হয়ে ওঠা এ আন্দোলনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির কার্যালয়েও। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
বিজেপি অফিসে আগুন: বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিনভর চলা উত্তেজনার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লেহ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি আশপাশের রাস্তায় ভাঙচুর চালানো হয়। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ। রাজধানী লেহতে এ নিয়ে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খল পরিবেশ। জলবায়ুকর্মী ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুকের অনশনের প্রতি সমর্থন জানাতে বুধবার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে আসে। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও দ্রুত পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। পরবর্তীতে তা ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়। উত্তেজনার মধ্যে আন্দোলনকারীরা এক সিআরপিএফ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে গোটা শহরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৭০ জন।
আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কেন্দ্রের। কিন্তু এর আগেই লেহ শহরে বিক্ষোভ করেন একদল যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অধিকাংশই ছিলেন তরুণ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী। তারা ‘লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য করো’ ও ‘কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব পালন করো’ স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস সত্ত্বেও বিক্ষোভ ক্রমেই তীব্রতর হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা ঘোষণা করেছেন। লাদাখের প্রতিনিধিদের অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা ভুল ছিল এবং তাদের দাবিদাওয়া খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। লাদাখবাসীর বিশ্বাস প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য সরাসরি বিজেপিই দায়ী। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বলেছেন, দাবিদাওয়া পূরণ না হলে আন্দোলন চলবেই, তারা পিছু হটবেন না, তাদের লড়াই থামবে না। লেহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোমিল সিং কারফিউ ঘোষণা করেছেন। লাদাখের এই গণ-বিক্ষোভ বিজেপিকে কার্যত কোণঠাসা করে ফেলেছে। এছাড়াও ওয়াংচুক জানিয়েছেন এটি জেন-জি বিক্ষোভ, এতে কংগ্রেসের কোনো হাত নেই।