1. info@dailyshadhinbarta.com.bd : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মৎস্য বিজ্ঞান পেশা: জলাশয়ের সীমানা পেরিয়ে ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত লোহাগাড়ায় পুকুরে ডুবে দুই জমজ শিশুর মৃত্যু লোহাগাড়ায় চলন্ত রেলে ঝাপ দিয়ে এক ব্যক্তির আত্মহত্যা দিনাজপুর বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ১০৮ গ্রেফতার রাঙ্গাবালী চরমোন্তাজ আব্দুল সাত্তার স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের সহায়তা ফুলবাড়িতে বাংলাদেশ কেমিস্টস্ ড্রাগিস্টস সমিতির মানববন্ধন মহা বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে হবে: এমরান সালেহ প্রিন্স সিলেটে আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে ‘দৈনিক সোনালী সিলেট’ দুদক কী সত্য লুকোচ্ছে? মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ আসিফের ছবিতে নয়, ওরা জুলাই বিপ্লবের মুখে জুতার মালা দিচ্ছে

মৎস্য বিজ্ঞান পেশা: জলাশয়ের সীমানা পেরিয়ে ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত

মোঃ মিনহাজুল ইসলাম
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

বাংলাদেশের মোট আয়তনের একটি সুবিশাল অংশ জুড়িয়ে রয়েছে জলাশয়। আর এই জলাশয়ে মৎস্য চাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের যোগান দিয়ে যাচ্ছে এই দেশের মৎস্য গ্রাজুয়েটগণ।

এই মৎস্য সেক্টর দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, সুস্থ, উদ্যমী ও মেধাবী নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। মৎস্য গ্রাজুয়েটগণের অগ্রণী ভূমিকার কারণে দেশ আজ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

২০২২-‘২৩ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৯.১৫ লাখ মে. টন। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ ২য় (এফএও ২০২৪), তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম এবং সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাসিয়া আহরণে ৮ম অবস্থানে রয়েছে।

দেশের ১৪ লক্ষ নারীসহ প্রায় ২ কোটি অর্থাৎ ১২ শতাংশ লোক মৎস্য সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। ২০২২-‘২৩ অর্থ বছরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে মোট ২.৭১ লক্ষ মে. টন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিশ্বের ৫২টি দেশে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মৎস্য সেক্টর। ২০২৩-‘২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানি হয় ৭৭৪০৭.৯৪ মে. টন; যার বাজার মূল্য ৪৪৯৬ কোটি টাকা।

মৎস্য বিজ্ঞান (ফিশারিজ) বিষয়ক পড়াশুনা:

সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে দেশ বরেণ্য জাতীয় অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মুহাম্মদ আমীনুল হক স্যার মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মৎস্য সেক্টরকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ও বাস্তবতার প্রয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বর্তমানে প্রায় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্য বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান ও ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মাৎস্য বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিও (পিএইচডি) প্রদান করছে।

ফিশারিজ -এ ভর্তির যোগ্যতা:

ফিশারিজ-এ ভর্তি হতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞান, গণিতসহ বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল করতে হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাক্রম এবং চয়েস এর সমন্বয় ঘটলে ফিশারিজে পড়তে পারবেন।

যে যে বিষয়ে পড়ানো হয়:

ফিশারিজ ফ্যাকাল্টিগুলিতে সাধারণত চার থেকে পাঁচটি মেজর ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে “একোয়াকালচার (মৎস্য চাষ)” বিভাগে কোথায়, কখন ও কীভাবে মৎস্য চাষ করা হবে এবং পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিলে পোনা ছেড়ে লালন-পালন করে বড় করা যায়, মাছের রোগবালাই, মৎস্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

‘বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস’ বিভাগে মাছের জিনতত্ব ও প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে পড়ানো হয়। ‘ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগে নদী-নালা, খাল-বিল, উন্মুক্ত জলাশয় সবকিছু কীভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনা করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা, মৎস্য খাদ্য প্রস্তুত ও মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে পড়ানো হয়। ‘ফিশারিজ টেকনোলজি’ বিভাগে মাছ ধরা থেকে শুরু করে মাছ আহরণ, পরে এর গুণাগুণ সংরক্ষণ, বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি করা সংক্রান্ত বিষয়ে পড়ানো হয়। ‘মেরিন ফিশারিজ’ বিভাগে সামুদ্রিক মাছ ও মাছের স্টক এসেসমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে পড়ানো হয়।

চাকরির ক্ষেত্র:

সরকারি খাত: বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডার ও নন ক্যাডার এর মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তরে চাকুরী (উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপসহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, খামার ব্যবস্থাপক, লিমনোলজিস্ট, মৎস্য সম্প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তা, মৎস্য পরিদর্শক, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস্য জরীপ কর্মকর্তা), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-তে ব্যবস্থাপক পদে এই সাবজেক্টের নির্দিষ্ট চাকুরী রয়েছে।

বিসিএস (সাধারণ) ক্যাডার চয়েসের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের সাধারণ ক্যাডারসমূহে চাকুরী করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ স্নাতক যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোন সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। কিছু সরকারী প্রজেক্ট ও প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সহায়তাকারী বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা/দপ্তরসমূহে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে, যেমন-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় প্রভৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:

প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে পাঠদান।

বেসরকারি খাত:

বেসরকারি সংস্থাসমূহ দেশের বিভিন্ন এনজিও -তে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন-বাংলাদেশ রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্রাক), প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, গ্রামীণ ব্যাংক, আরডিআরএস, বাঁচতে শেখা, টিএমএসএস, এসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল এডভান্সমেন্ট (আশা), জাকস, গাক প্রভৃতি । এছাড়াও মৎস্য চাষ ও রপ্তানি কোম্পানি-তে (ফার্ম ম্যানেজার বা হ্যাচারি ম্যানেজার, ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট ম্যানেজার, মান নিয়ন্ত্রণ ও মান যাচাইকরণ বিশেষজ্ঞ), এগ্রোভেট কোম্পানি: মৎস্য খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি (টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার, সেলস বা মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ), মৎস্য ওষুধ কোম্পানি (ফিল্ড অফিসার বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট), প্রাইভেট হ্যাচারি ও ফার্ম (উৎপাদন ব্যবস্থাপক, জলজ পণ্য ব্যবস্থাপক), মৎস্য চাষ ও প্যাকেজিং কোম্পানি ( উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, মান নিয়ন্ত্রণ ও মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ) প্রভৃতি।

উদ্যোক্তা হিসেবে:

ব্যক্তিগত উদ্যোগে (নিজস্ব ফিশ ফার্ম বা অ্যাকুয়াপনিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠা, হ্যাচারি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা, মৎস্যখাদ্য উৎপাদন ও বিক্রয়), ফ্রিল্যান্সিং ও পরামর্শক (মৎস্য খাতের প্রযুক্তিগত ও ব্যবসায়িক পরামর্শ প্রদান, জৈবিক মৎস্য চাষ বা পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি নিয়ে কাজ)

আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ:

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন- ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টার, ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি), এফএও, ইউএনডিপি, কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, কারিতাস বাংলাদেশ, নেচার, কনজারভেসন মুভমেন্ট, এশিয়ান ওয়েটল্যান্ড ব্যুরো, ডানিডা (ডিএএনআইডিএ), সোসাইটি ফর কনসারভেসন অব নেচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (এসসিওএনই), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেসন অব নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স (আইইউসিএন), সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ বাংলাদেশ (এসএপি), ইউএসআইডি প্রভৃতি।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থান:

বর্হিবিশ্বে মৎস্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশী ফিশারিজ গ্রাজুয়েট সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছেন। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষা (যেমন- এম.এস., এম.ফিল., পি-এইচ.ডি. ইত্যাদি) গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষত আফ্রিকা অঞ্চলের দেশসমূহে মৎস্য চাষ ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে মৎস্য পেশাজীবীর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে মৎস্য ও মৎস্য-জাত দ্রব্য আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ রয়েছে।

ফিশারিজে চ্যালেন্জসমূহ:

জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলাশয় ভরাট, মৎস্য খামারে বিদ্যুতের বাণিজ্যিক রেট, সরকারী চাকুরীতে পদোন্নতির ধীরগতি ও দূর্বল জনবল কাঠামো, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনায় লজিস্টিক সাপোর্টের অপ্রতুলতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

পরিশেষে, ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের জন্য বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রের পরিধি ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই মৎস্য খাতের উন্নয়নে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক।

সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষতার বিকাশের মাধ্যমে একজন ফিশারিজ গ্রাজুয়েট অত্যন্ত সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। পাশাপাশি ‘আমিষেই শক্তি, আমিষেই মুক্তি’ বাংলাদেশ সরকারের এই স্লোগানের যথার্থ বাস্তবায়ন তখনই হবে যখন আমরা মৎস্য সেক্টরের দক্ষ গ্রাজুয়েটদের এই বিশেষায়িত সেক্টরে যথাযথ চাকুরী প্রদানের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে পারব। এটি অনুধাবন করতে হবে যে, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য সময়োপযোগী গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মৎস্য বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবলের বিকল্প নেই।

লেখক- মো: আব্দুল হান্নান, সহকারী পরিচালক (রিজার্ভ), মৎস্য অধিদপ্তর ও পিএইচডি গবেষক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Licence No- TRAD/DSCC/210965/2019 and applied for registration.

Community Verified icon
 

Community Verified icon