দেশবাসীর মনোযোগ এখন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের দিকে। আজ শুক্রবার লন্ডনের দ্য ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য সফররত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই হোটেলেই অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই বৈঠককে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় ঘোষণা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে যে টানাপড়েন এবং সার্বিকভাবে যে অচলাবস্থা চলছে সে বিষয়ে এই বৈঠকে একটা সমাধান আসবে। সরকার ও দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দূরুত্ব কমে আসার সূচনা হিসেবেও দেখা হচ্ছে সম্ভাব্য এই বৈঠকটিকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই বলে রেখেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা আশা করি এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান চ্যালেঞ্জগুলো নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। যদি সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তবে এই বৈঠক দেশের রাজনীতিতে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে।
নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।”
বিএনপি, তাদের সমমনা দলগুলো এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু গত সোমবার যুক্তরাজ্য যাওয়ার আগে গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ঈদুল আজহার ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঘোষিত এই সময় সম্পর্কে বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়। দলটির পক্ষে রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি বিষয় সার্বিক বিবেচনায় ওই সময় নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এই পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনের সম্ভাবনা হিসেবে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের সংবাদটি আসে। তার আগে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতাদের পরামর্শ দেন—বিতর্ক নয়, নির্বাচন প্রয়োজন। সংঘর্ষ এড়িয়ে চলাই ভালো।’ এতে দলের প্রতি এই বার্তা পৌঁছে যায় যে তীব্র সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখা উচিত।