আগামীকাল ২২শে ডিসেম্বর সারাদেশে মানুষের হাতে হাতে পৌছে যাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা। দীর্ঘ ১১ বছর বন্ধ থাকার পর আবার নতুন করে পত্রিকাটি গণমানুষের পক্ষের শক্তি হয়ে নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

‘আমার দেশ’ পত্রিকার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, নিয়মিত পত্রিকা ছাপিয়ে মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া এটা আমাদের জন্য একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই রাস্তা সৃষ্টিকর্তা অল্প সময়ে মধ্যে আমাদের জন্য খুব সহজ করে দিয়েছেন। কতকপি বিক্রি হবে সেটা বিষয় না, বিষয় হচ্ছে আপনাদের চেষ্টা থাকতে হবে আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, তারা দেশের মানুষকে যেন নতুন কিছু দিতে পারেন। খবরের ভেতরে যে খবরটি লুকিয়ে রয়েছে সেটি খুঁজে বের করবেন এবং সেটিই প্রকাশ করবেন। তবেই মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

দেশের সাধারণ মানুষ যারা ‘আমার দেশ’ পত্রিকা পড়বে তাঁরা আপনার লেখা সংবাদটি পড়েই যেন বুঝতে পারে এই সংবাদটি তৈরি করতে এবং পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে আপনি কতটা পরিশ্রম করেছেন। আমাদের সকলের পরিশ্রম একত্রিত হয়ে যখন মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণ করতে পারবে তখনই ‘আমার দেশ’ গণমানুষের পত্রিকা হয়ে উঠবে এবং মাথা উঁচু করে দাড়াতে আর কোন বাধা থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমাদের সকলের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে। কারণ যখন ‘আমার দেশ’ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হলো তখন আওয়ামীলীগের এমপি, মন্ত্রীরা রাতে ঘুমাতে পারতো না। আজ পত্রিকা বন্ধ করলাম আবার কাল কোন ঘটনা ঘটে, সেই চিন্তা করেই তাদের রাতের ঘুম নষ্ট করে সকাল হতো। তাই অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, দৈনিক আমার দেশের জুনিয়র সাংবাদিক থেকে সম্পাদক পর্যায়ে প্রত্যেকেই যেন এক একজন দৈনিক আমার দেশ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘আমার দেশ’ পূর্বের চাইতে আরো কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

যে সকল সাংবাদিক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই দেশ, জাতি, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা তুলে ধরবে এবং যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখে যাবে। ‘আমার দেশ’ অফিসে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে তৈরি করতে পারবেন, তারাই ‘আমার দেশ’ পত্রিকাতে কাজ করতে পারবে। আর যারা কঠোর পরিশ্রম ও নিজেদের যোগ্যতা প্রমানে ব্যর্থ হবে তাদের সাথে আমার যতই সুসম্পর্ক থাকুক না কেন, তারা ‘আমার দেশ’ পত্রিকাতে কাজের সুযোগ পাবে না। আজ ‘আমার দেশ’ পত্রিকার কারওয়ান বাজার অফিসে পত্রিকার সাংবাদিক ও পত্রিকার বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সাথে একমতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটি বাজারে আসে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সবসময় ‘আমার দেশ’ সংবাদ প্রকাশ করে গেছে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০১৩ সালে পত্রিকাটি প্রথমবারেরমত বন্ধ করে দেওয়া হয়। আওয়ামীলীগ সরকারের ফ্যাসিবাদ, দূর্নীতি, লুটপাট, গুম ও খুনের বিরুদ্ধে পত্রিকাটি নিয়মিত লিখে গেছে।

যার কারণে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কমান্ড স্টাইলে পত্রিকার নিজ কার্যালয় থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে পত্রিকাটি দীর্ঘ ১১ বছর একটানা বন্ধ রাখা হয়। এমনকি তাকে গ্রেফতারের পর পত্রিকার ছাপাখানার কিছু মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি সরকারের কিছু এমপি ও মন্ত্রীর নির্দেশে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি যন্ত্রপাতি যে গুলো চুরি করা সম্ভব ছিলোনা সেগুলো সব নষ্ট করে দেওয়া হয় যেন এই ছাপাখানা আর কখনো চলতে না পারে।

ফ্যাসিবাদ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশপ্রেমিক ও আদর্শবান সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ ও ২০১৬ সালে দুই দফায় গ্রেফতার করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল জীবন অতিবাহিত করার পরে ২০১৬ সালে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে চলে যান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে আওয়ামীলীগের আরো প্রভাবশালি এমপি-মন্ত্রীরাও দেশ ছেড়ে পালাতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রায় ৫ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ বাংলাদেশে ফিরে মাত্র ২ মাসের ভেতর পত্রিকাটি চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।