1. info@dailyshadhinbarta.com.bd : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা Shadhin Barta
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
প্রবাস নয়, দেশেই ‘কমলা’ চাষে ভাগ্য বদল শার্শার আবু হানিফের কাশি দিয়ে ধরা পড়লেন, খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতি চক্রের ৩ সদস্য আটক যশোরে ফের ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার স্বর্ণসহ পাচারকারী আটক নেত্রকোনায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন নভেম্বর মাসে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান — প্রস্তুত বিএনপি ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ, শিকারে নামতে প্রস্তুত জেলেরা সময় এসেছে পরিবর্তনের: জাতিসংঘকে তাল মেলাতে হবে, বললেন ড. ইউনূস নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণ ও ‘বিদেশি চাপ’ নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব সালমান শাহ হত্যা মামলা: পলাতক আসামিদের অবস্থান শনাক্তে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বিকালে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

সোনাই মাধব: মৈমনসিংহ গীতিকার মঞ্চভাষ্যে এক পরীক্ষামূলক অভিযাত্রা

সাহিত্য ডেস্ক:
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
এস এম আজাদ রহমান, বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই একটি অনন্য স্থান দখল করে আছে লোক নাট্যদল। এই দলের অন্যতম সাড়া জাগানো নিরীক্ষা ধর্মী প্রযোজনা ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে সোনাই মাধব ইতিমধ্যেই ২০০তম মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নাটকটির ২০২তম মঞ্চায়ন। এটি কেবল একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, বরং আমাদের নাট্য ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা লোকসংস্কৃতি, সংগীত এবং যাত্রাপালার আঙ্গিককে এক নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে।

লোকনাট্যের ভান্ডার থেকে সোনাই মাধব নাটকের উত্স মৈমনসিংহ গীতিকা। বাংলার গ্রামীণ লোককাহিনীভিত্তিক এই মহাকাব্যধর্মী আখ্যান শত শত বছর ধরে মৌখিক সাহিত্য হিসেবে টিকে আছে। লোক নাট্যদল ১৯৯৩ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো মঞ্চে আনে এই প্রযোজনা। তখন থেকেই নাটকটি কেবল নাট্যরসিকের হৃদয় জয় করেনি, বরং নাট্যসমালোচকদের কাছেও সমানভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নাটকটির ১০০তম মঞ্চায়ন। ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হয় ১৫০তম প্রদর্শনী। আর ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই নাটকটি ২০০তম মাইলফলক স্পর্শ করে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে মঞ্চায়িত হওয়া এই নাটক প্রমাণ করেছে এর প্রাণশক্তি ও দর্শকপ্রিয়তা।

সোনাই মাধব নাটকের অন্যতম বিশেষত্ব এর আঙ্গিক। এখানে যাত্রাপালা ও পদাবলি কীর্তনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। দীনেদ্র চৌধুরীর সুরারোপিত গান, মোস্তফা আনোয়ার স্বপনের সংগীত আয়োজন, অভিজিৎ চৌধুরীর সংগীত সমন্বয় নাটকটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। নাটকের সঙ্গীত কেবল অলঙ্কার নয়, বরং কাহিনির অনিবার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে।
পরিচালক ভিনসেন্ট ইউজিন গোমেজ লোকায়ত রীতি ও আধুনিক নাট্য ভাষার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করেছেন এক নতুন নাট্যভাষা। দর্শক যেন একাধারে যাত্রার গাম্ভীর্য, কীর্তনের আবহ এবং আধুনিক মঞ্চনাট্যের দৃশ্য-পরিকল্পনা অনুভব করেন। এই নাটককে তাই এক কথায় “নিরীক্ষাধর্মী প্রযোজনা” বলা যায়।

নাটকের প্রাণ হলো এর দলগত অভিনয়। ইউজিন গোমেজ, জাহিদ চৌধুরী, আনোয়ার কায়সার, তৌহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য শিল্পীদের শক্তিশালী অভিনয় নাটককে বহন করে নিয়ে যায়। বিশেষ করে সোনাই চরিত্রে এম সাদেকুল ইসলাম আবেগঘন উপস্থাপন দর্শকের মনে দাগ কাটে।
যাত্রাশৈলীর অতিরঞ্জন, নৃত্যভঙ্গি এবং উচ্চকণ্ঠ সংলাপপ্রদানের মধ্যে দিয়ে তারা একদিকে নাট্যধর্ম মেনে চলেন, আবার অন্যদিকে আধুনিক দর্শকের রুচিকেও আকর্ষণ করেন। এ নাটকে কোরাস অভিনয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দলগত নৃত্য ও সংগীতের সাথে চরিত্রদের আবেগময় অভিব্যক্তি দর্শকদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

সোনাই মাধব নাটকের সাফল্যের জায়গা হলো এর লোকায়ত রীতি পুনরাবিষ্কার। নাটকটি তরুণ প্রজন্মকে বাংলার লোকনাট্য ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। দর্শকপ্রিয়তা প্রমাণ করে, যাত্রাশৈলী বা পদাবলি কীর্তনের মতো আঙ্গিক এখনও প্রাসঙ্গিক হতে পারে, যদি তা সৃজনশীলভাবে উপস্থাপিত হয়। তবে সীমাবদ্ধতাও আছে। তিন দশকের পুরনো প্রযোজনা হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় অভিনয়ভঙ্গি এবং সেট পরিকল্পনায় একধরনের পুনরাবৃত্তি চোখে পড়ে। দর্শকেরা নতুনত্ব প্রত্যাশা করলেও, অনেক সময় তারা একই দৃশ্য বিন্যাস বারবার পাচ্ছেন। এছাড়া কোরাস অংশে কখনও কখনও অতিরিক্ত উচ্চকণ্ঠতা কাহিনির আবেগকে আড়াল করে ফেলে।

বাংলাদেশের মূলধারার নাট্যচর্চায় শহুরে বাস্তববাদী নাটকগুলিই বেশি প্রাধান্য পায়। সে তুলনায় লোক নাট্যদলের সোনাই মাধব এক ভিন্ন ধারা প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, আমাদের নিজস্ব লোকায়ত ঐতিহ্য দিয়েও আধুনিক মঞ্চে দর্শক আকৃষ্ট করা যায়। একই সঙ্গে নাটকটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধও বটে। বিশ্বায়নের যুগে যখন পাশ্চাত্য প্রভাব আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করছে, তখন সোনাই মাধব দেখায়—বাংলার লোককাহিনী, গান, নৃত্যই পারে দর্শকের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলতে।

সোনাই মাধব নাটকের ২০২তম প্রদর্শনী কেবল একটি সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতার প্রতীক। লোক নাট্যদল তাদের নিরীক্ষা ও আঙ্গিকের মাধ্যমে নাট্যরসিকদের একটি অভিনব অভিজ্ঞতা দিয়েছে। নাটকটির সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—লোকায়ত সংস্কৃতি কখনো মরে যায় না, বরং সময়ের সাথে নতুন রূপে ফিরে আসে।
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সোনাই মাধব এক আলোকবর্তিকা, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
LICENCE NO- TRAD/DSCC/210965/2019 and applied for registration.
Community Verified icon
 

Community Verified icon