ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত কিশোরগঞ্জের বুকে জন্মানো অসংখ্য কিংবদন্তির মধ্যে “শহীদ পাগলা” এক অনন্য নাম। আশি ও নব্বই দশকে তিনি তাঁর ব্যতিক্রমী মানবিকতার জন্য কিশোরগঞ্জের মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক নেতা ছিলেন না, তবুও তাঁর সরল আবেদন আর অদ্ভুত ব্যক্তিত্বের টানে মানুষ স্বতঃরফৃর্তভাবে তাঁকে দান করত, আর সেই দান পৌঁছে যেত অগণিত।
অসহায় মানুষের কাছে যিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ সেবক
তাঁর আসল পরিচয় আজও অজানা। তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন “প্রিয় শহীদ ভাই” বা “শহীদ পাগলা” নামে। রিকশায় বসে মাইকের মাউথপিসে উচ্চস্বরে তিনি আর্ত-মানবতার জন্য সাহায্য চাইতেন। তাঁর হাতে থাকা বাঁশের পাত্রে জমা পড়ত মানুষের সহানুভূতি। সংগৃহীত এই অর্থ তিনি শহরের হাজার হাজার গরিব ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করতেন। তিনি ছিলেন পদ-পদবিহীন এক নীরব সমাজসেবক, যিনি জনসেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
আধ্যাত্মিকতা ও বিশ্বাস শহীদ পাগলা ছিলেন গভীর ধর্মপ্রাণঃ)
টানা বারো বছর সিয়াম সাধনা তাঁর আধ্যাত্মিকতার গভীরতা প্রমাণ করে। অনেকেই তাঁকে আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী মহৎ ব্যক্তি মনে করতেন, যা তাঁর দান সংগ্রহে আরও গতি দিয়েছিল। কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ তাঁকে ঐশ্বরিক মানুষ হিসেবেই দেখত।
অবিস্মরণীয় প্রেরণাঃ
আজ তিনি সশরীরে না থাকলেও, কিশোরগঞ্জের মানুষের মনে তিনি এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি হয়ে আছেন। তাঁর জীবন শেখায় যে, মানুষের সেবার জন্য প্রাচুর্য বা ক্ষমতার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু একটি শুদ্ধ মন আর গভীর ভালোবাসা। নিজের কর্ম ও মানবিকতার জন্যই তিনি “শহীদ পাগলা” উপাধি পেয়েছিলেন এবং কিশোরগঞ্জের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। উল্লেখ্য, তিনি শহীদী মসজিদ বা পাগলা মসজিদের নামকরণের কারণ ছিলেন না; সেই নামকরণগুলো ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটে হয়েছে।
এই রহস্যময় আধ্যাতিক মানুষটিকে নিয়ে লিখেছেন, সাংবাদিক ও লেখক ইকবাল কবির।