চরম দারিদ্র্যের কারণে নিজের চার সন্তানকে বিক্রি করার মতো মর্মান্তিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হওয়া নেত্রকোনার অতিদরিদ্র মোঃ রাজন মিয়া ও সীমা দম্পতির জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনলো জেলা প্রশাসন। নেত্রকোণার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান মহোদয়ের মানবিক হস্তক্ষেপে পুনর্বাসনের পূর্ণাঙ্গ ধাপ সম্পন্ন হলো।
এই মানবিক উদ্যোগ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। প্রথম ধাপ: আয়ের উৎসের ব্যবস্থা গত ২৪ সেপ্টেম্বর, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খবর আসে যে রাজন মিয়া তীব্র দারিদ্র্যের কারণে তাঁর শিশুদের বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।
খবরটি জানার পরই জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। দ্রুততম সময়ে, ৩০ সেপ্টেম্বর, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজন মিয়াকে একটি অটো-রিকশা প্রদান করা হয়। এই নতুন অটো-রিকশাটি রাজন মিয়ার পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হয়, যা শিশুদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
জেলা প্রশাসকের মানবিক বার্তা: এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান মহোদয় বলেন, “একটি শিশুও যেন দারিদ্র্যের কারণে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ২৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তাঁর মতো একজন কর্তব্যনিষ্ঠ ও মানবিক কর্মকর্তার নেতৃত্বেই এই মহৎ উদ্যোগ সফল হলো।
সহযোগিতায় ব্র্যাক (BRAC): জেলা প্রশাসনের এই মহৎ কাজে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক (BRAC) সহযোগিতা করেছে, যা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শেষ ধাপ: নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর পুনর্বাসনের শেষ ধাপে, আজ ১৮ অক্টোবর, জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণা তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাজন-সীমা দম্পতির হাতে নবনির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন। এখন থেকে রাজন এই নতুন ঘরে সুন্দর পরিবেশে তার স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে ভালোভাবে বসবাস করবেন।
জেলা প্রশাসক আশা প্রকাশ করেন যে রাজন প্রদত্ত অটো রিকশা চালিয়ে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন, সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন এবং আর কারো কাছে সাহায্যের জন্য মুখাপেক্ষী হবেন না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজন-সীমা দম্পতি অভাবের তাড়না থেকে মুক্ত হয়ে এক সুন্দর ও স্বাবলম্বী জীবনের পথে যাত্রা শুরু করলেন।