সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কাছে যেন আলাদিনের রত্ন ভান্ডারের প্রদীপশিখা ছিলো। সেই প্রদীপই যেন দিনে দিনে আধারে ঢাকতে শুরু করেছে। বেঞ্জীর, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ পাঁচজনের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁদের নামে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ রোববার বিকেলে এ আদেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দ (ক্রোক) এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাঁদের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন একই আদালত।
নতুন করে কেন বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ ক্রোকের আদেশ চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তিনি আদালতকে বলেন, বিভিন্ন জেলায় বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন।
এখন যদি এসব সম্পদ জব্ধ করা না হয়, তাহলে অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা, আদালতে অভিযোগপত্র জমা, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পদ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের সব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। শুনানির একপর্যায়ে আদালত জানতে চান, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের নামে থাকা শেয়ারের পরিমাণ এবং ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে আপনারা জানেন কি না। জবাবে পিপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের নামে যেসব শেয়ার রয়েছে, সেগুলোর প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে পেরেছি। আদালতের আদেশের পর ওই সব প্রতিষ্ঠানে তাঁদের কত শেয়ার আছে এবং ব্যাংক হিসাবগুলোতে কত অর্থ জমা আছে, তা বের করব।’
আদালত শুনানি নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
দুদক ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য বলছে, গুলশান আবাসিক এলাকার র্যাংকন আইকন টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের নামে। গত বছরের ৫ মার্চ এক দিনে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়। চারটি ফ্ল্যাটের মধ্যে তিনটি সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে। অপর ফ্ল্যাটটি বেনজীর আহমেদের ছোট মেয়ের নামে। এর বাইরে ঢাকার অদূরে সাভারে তিন কাঠা জমি রয়েছে এই পরিবারের। ওই জমি কেনা হয় ২০১২ সালের ২১ জুন।