কুড়িগ্রাম থেকে মোঃ রফিকুল ইসলাম: কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম তার মেধা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জেলায় সাধারন মানুষের সামনে সততা ও মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি দায়িত্ব নেয়ার ১০ দিন পরই কনস্টেবল নিয়োগের বিশাল ও চ্যালেঞ্জিং কর্মযজ্ঞ সততার সাথে সম্পূর্ন করেন । এখানে বাধা ছিল কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য, সিভিল স্টাফ আর কিছু দালাল, যারা বছরের পর বছর নানাভাবে মানুষকে প্রতারণা করেছে নিয়োগের নামে।
প্রথমেই এই অসাধুচক্রকে চিহ্নিত করে জেলার বাইরে বদলি করা এবং কয়েকজন সিভিল স্টাফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর পরই হঠাৎ করে ভারতে ডিসি–ডিএম সম্মেলনে যেতে হয়।
নিয়োগের মত কাজ রেখে যেতে না চাইলেও যেতে হয়েছিল এবং মিটিং শেষ করেই কোনমতে লাঞ্চ করে তিনি প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সড়কপথে কুড়িগ্রাম পৌঁছে পরের দিন সকালেই নিয়োগের বাকি কাজ ধারাবাহিকভাবে শেষ করেন।
অল্পদিনের মধ্যেই কুড়িগ্রামে হানা দিল বন্যা। সেখানে পুলিশের দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক দায়িত্ব পালনও মূখ্য হয়ে ওঠে এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাধ্যমত ত্রাণ সরবরাহ করা হয়। দায়িত্ব পালনের প্রথম থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখানকার ভূপ্রকৃতি, ভারতের সাথে বিশাল সীমানা, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে মাঝেমাঝেই বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল।
তিন মাসেই তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারায় এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ায় অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসে।’
‘রংপুর রেঞ্জের অধিকাংশ জেলার সমস্যা হল এখানে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর কম এবং তারা অধিকাংশ বয়স্ক ও সারাজীবন এই এলাকায়ই চাকরি করায় ডিএমপি বা পুলিশের অন্য ইউনিটের মত অতটা দক্ষ নন।
এদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে, মোাটিভেট করে, শাসন ও সোহাগ করে নিজের মত করে তৈরি করেছেন। জেলা পুলিশের সকল পর্যায়ের সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথাযথ তদন্ত, দীর্ঘদিন জমে থাকা মামলাসমূহের নিস্পত্তি, ওয়ারেন্ট তামিলের হার বৃদ্ধির জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে সাঁড়াশি অভিযান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যোগাযোগ করে জেলার জন্য ৭টি ব্রান্ড নিউ গাড়ি বরাদ্দের পাশাপাশি পুরাতন গাড়িগুলো সকল থানায় সমন্বয় করে দিয়ে থানা এলাকায় টহল বৃদ্ধি, এএসআই এসআইদের পারফরমেন্স মাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা, ফোর্সের শৃংখলা রক্ষায় নিয়মিত মাস্টার প্যারেড, মাদকের পাচার রোধে মাদক প্রবণ এলাকায় এবং জেলার প্রবেশমুখে ২৪/৭ স্থায়ী চেকপোস্ট ( যেটা ইতিপূর্বে ছিল না), সকল থানায় রাত্রিকালীন টহলগাড়ি বৃদ্ধি, বিভিন্ন বাজারে সিসিটিভি স্থাপন করে মুজিববর্ষে কুড়িগ্রামের আইন শৃংখলা রক্ষায় জেলা পুলিশের কাজকে ঢেলে সাজাতে শুরু করেন, যার সুবাদে গত ফেব্রæয়ারিতে কুড়িগ্রাম জেলা রংপুর রেঞ্জে সেরা জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম
‘হঠাৎ করেই সবকিছুতে ছেদ পড়লো করোনার ভয়াল থাবায়। করোনার কারণে পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক অনেকটাই বাধাগ্রস্ত, সারাদেশেই পুলিশ ছুটে বেরিয়েছে প্রবাসী, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ফেরতদের তালিকা তৈরি, লকডাউন নিশ্চিত করা, হাট–হাজার বিভিন্ন মাঠে স্থানান্তর, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, রাস্তাঘাট, মসজিদে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, রোগীকে হাসপাতালে নেয়া, করোনা সন্দেহে ফেলে যাওয়া লাশের জানাজা , দাফন আর অসহায় মানুষের দরজায় খাবার পৌঁছে দিতে।
সারা দেশের মানুষের প্রশংসাও অর্জন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামের সদস্যরাও একই কাতারে সামিল হয়ে করোনা প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ কাজে জেলা পুলিশের সবচেয়ে বড় প্রেরণা জনাব দেবদাস ভট্টাচার্য্য, বিপিএম, ডিআইজি, রংপুর রেঞ্জ স্যার , যার স্নেহে সিক্ত হয়ে রংপুর রেঞ্জের আটটি জেলার পুলিশ সুপাররা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
পুলিশকে আধুনিক ও গতিশীল করার জন্য নানা উদ্ভাবনী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যার মূল থিম মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার।’
করোনাকালে পুলিশের মানবিক দিকগুলো অনেক বেশি প্রশংসিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা দেশের দরিদ্রতম জেলা হওয়ায় এখানে মানবিক সাহায্যর আবেদনও অনেক বেশি। কারও চিকিৎসার জন্য সহায়তা, কারও লেখাপড়ার জন্য সাহায্যের আবদেন প্রায়ই তিনি গ্রহন করেন।
এ বাবদ সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় পরিচিতদের মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। সবাইকে একোমোডেট করা সম্ভব না কখনই, তবুও চেষ্টা করেন। চিলমারীর সুরভীর মৃত্যু, প্রতিবন্ধী যে মেয়েটির চিকিৎসার ভার তিনি নিয়েছেন।
আর ভালো লাগার স্মৃতি বলতে সুখাতি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুদের সাথে কাটানো সময়।’ একজন পুলিশ অফিসার অবশ্যই সবসময় নিজের কাজটা আগে করবে, তারপর অন্যান্য সামাজিক কাজ। এ সময়ে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার চেয়ে জরুরি বিভিন্ন সময়ে জমি নিয়ে বিবাদের জেরে কৃষকের নিজের ধান যাতে অন্য কেউ কেটে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
ত্রাণ বিতরণে পুলিশ অনেক প্রশংসা কুড়ালেও মূলকাজটা হবে সরকারি ত্রাণ নিয়ে যাতে কেউ অনিয়ম করতে না পারে, সেদিকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো। একজন কর্মকর্তা সৎ, দক্ষ হয়ে প্রশংসার পাত্র হলেও অনেক ক্ষেত্রে অধীনস্তদের কাজের মান বা সেবা প্রদানের মান কাঙ্খিত পর্যায়ে থাকে না, এদিকটা খেয়াল না করলে নিজে মহামানবরুপে পূজিত হলেও বাস্তবে ফলাফল শূন্য।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানায়, অনেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশিভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে নিজের ক্ষমতার সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চাই।