 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    আগামী অক্টোবরের মধ্যেই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে, আর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন-আয়নাঘর, শাপলা হত্যাকাণ্ড এবং ভোট ডাকাতিসহ’ শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের সব চিত্র ঐতিহাসিক তথ্য আকারে উপস্থাপন করা হবে।
আজ শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানায় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
দেড় দশকের বেশি সময় দেশ শাসন করা শেখ হাসিনার বাসভবন ‘গণভবন’ বহন করছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আর জনরোষের চিহ্ন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা ‘হাসু আপা পালাইছে’, ‘কই গেলি হাসিনা’, ‘শাপলা চত্বরের বিচার চাই’, ‘কিলার হাসিনা- এমন সব প্রতিবাদের স্লোগান।
সেই গণভবনে তৈরি হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’, যা গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম, শহীদ ও বিজয়ের দলিলরূপে গড়ে তোলা হচ্ছে।
গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ১৫ জুলাই পূর্তকাজের অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের আগেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের অনেক কাজ এগিয়ে নেয় সরকার। ইতোমধ্যে সেখানে বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষণও করা হয়েছে। গণভবনের অবস্থান জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে; শেরেবাংলা নগরে। সেখানে বসবাসকারী একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারপ্রধান হিসেবে এখানেই ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলে ২০১০ সালে পরিবারসহ গণভবনে ওঠেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত সেটিই ছিল তার ঠিকানা।
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে এ জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা হাসিনার দুঃশাসনের চিত্রগুলো এই জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য কিউরেট করছি, যাতে ১৬ বছরের ফ্যাসিজমের ইতিহাস জীবন্ত থাকে। জীবন্ত থাকে সরাসরি গণভবন থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত সব অত্যাচারের এবং নৃশংসতার ইতিহাস।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাদুঘর নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, এ জাদুঘরে যারা আসবেন তারা ৫ আগস্ট গণভবনে জনতার ঢল অনুভব করবেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার এই অনুভব নিয়ে আসাটাই এই জাদুঘরের একটা বড় কাজ।’ জাদুঘর নির্মাণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটি প্রসিকিউশন টিম ও গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে বলে জানান জাদুঘরের চিফ কিউরেটর তানজীম ওয়াহাব।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এটি একটি ইউনিক জাদুঘর হবে। ১৬ বছরের দুঃশাসনের গল্পগুলো এই জাদুঘরে পরম্পরা আকারে থাকবে। দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন, শেখ হাসিনা কীভাবে দেশ চালাতেন।’
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘গুম-খুনের নির্দেশ দেওয়া অনেক অডিও ইতোমধ্যেই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে। এই অডিওগুলো জাদুঘরে রাখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কীভাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোকে ডেকে এনে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতেন সে চিত্রও উঠে আসবে।’
এছাড়া, জাদুঘরে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকবে, যেখানে জুলাই ও ১৬ বছরের দুঃশাসন নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাসসুম।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের গবেষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড্যানিয়েল আফজালুর রহমান, কবি হাসান রোবায়েত, মালিহা নামলাহা, জাদুঘরের শিল্পী তেজশ হালদার জশ, মোসফিকুর রহমান জোহান, জাদুঘরের স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয়কারী হাসান এনাম।