সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত মৌলভীবাজার। মুখোশধারীদের পরিকল্পিত হামলায় গুরুতর আহত দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের এম. শাহজাহান।
মৌলভীবাজারে এক সাংবাদিককে পূর্বপরিকল্পিতভাবে চিহ্নিত করে দলবদ্ধভাবে নির্মম হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক এম. শাহজাহান আহমদ-এর উপর ঘটে যাওয়া এই নারকীয় হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে, শহরের সদর হাসপাতালের মসজিদ সংলগ্ন ওজুখানার ভেতরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তারাবির নামাজের পর মসজিদে একা অবস্থান করছিলেন সাংবাদিক শাহজাহান। রাত ১০টার দিকে তিনি মসজিদের পাশে থাকা পস্রাবখানায় গেলে ১০ থেকে ১২ জন মুখোশধারী যুবক অতর্কিতভাবে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রথমে তারা ওজুখানার ভেতরেই এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, লাথি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। শাহজাহান রক্ষা পেতে চিৎকার করলেও আশপাশে থাকা কেউ এগিয়ে আসেনি। কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা তাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে এবং সড়কের ওপর ফেলে নির্মমভাবে মারধর চালায়।
হামলাকারীদের মুখে মাস্ক থাকায় তাদের তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তারা শাহজাহানের ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই হামলা শুরু করে, যা এই ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে প্রমাণ করে। হামলার পর তারা হাসপাতালের নতুন ভবনের পাশের ছোট গেট দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
রক্তাক্ত সাংবাদিক, নির্বিকার দর্শক!
সাংবাদিক শাহজাহান যখন অসহায়ভাবে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন, তখন আশপাশের লোকজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। নির্যাতনের ভয়, নাকি দায়িত্বহীনতা—এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় থাকা সাংবাদিক শাহজাহানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার মাথা, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
কেন এই হামলা? রহস্যের জাল!
এই হামলার পেছনে প্রকৃত কারণ কী—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি পূর্বপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত হামলা বলে অনেকেই মনে করছেন। সাংবাদিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, শাহজাহানের পেশাগত কাজের কারণে কেউ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এই হামলা চালাতে পারে।
ঘটনার খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরে হাসপাতালে গিয়ে আহত সাংবাদিকের খোঁজ নেন।
সদর মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পুলিশ হামলার কারণ খতিয়ে দেখছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেছে।”
সাংবাদিক সমাজের প্রতিবাদ ও ক্ষোভ
এই নির্মম হামলার ঘটনায় জেলার সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
একজন সাংবাদিকের উপর প্রকাশ্যে এমন বর্বর হামলার ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর সংকেত বহন করে। এ ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে সাংবাদিকরা ভবিষ্যতে আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়বেন বলে মনে করছেন অনেকে।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যদি এমন হামলার শিকার হতে হয়, তবে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের তথ্য জানার অধিকার চরম হুমকির মুখে পড়বে। মৌলভীবাজারের সাংবাদিক সমাজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এ ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত।
এখন প্রশ্ন একটাই—কবে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন? প্রশাসনের ভূমিকা কি শুধু আশ্বাস দেওয়া পর্যন্তই থাকবে, নাকি প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে?
এখন সময় এসেছে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার। একজন সাংবাদিকের রক্ত যেন কোনোভাবেই বৃথা না যায়!