ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারে কেনাকাটার ব্যস্ততা তুঙ্গে। বিপণিবিতান, মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে, যা শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
ঈদের সময় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে, যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়।
রাস্তায় অবৈধ পার্কিং রোধে অভিযান চালানো প্রয়োজন। অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত যানবাহন যেন এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে না থাকে, সেদিকে কঠোর নজর দিতে হবে। শহরের কিছু এলাকাকে অস্থায়ী পার্কিং জোন হিসেবে নির্ধারণ করলে যানজট কিছুটা কমবে।
যানজট নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে, যেমন:
একমুখী (ওয়ান ওয়ে) ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারী যানবাহনের চলাচল সীমিত রাখা
শপিংমলের আশপাশে ফুটপাত উন্মুক্ত রাখা
ঈদের কেনাকাটায় আসা মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজার এলাকায় শাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করলে পকেটমার, ইভটিজার ও ছিনতাইকারীদের সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। শপিংমল ও মার্কেটগুলোর প্রবেশপথে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো গেলে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।
এছাড়া, জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া জরুরি। মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদে রাখা এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত নিকটস্থ পুলিশকে জানানোর ব্যবস্থা রাখা দরকার।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যেমন:
গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ টহল
বিশেষ কন্ট্রোল রুম স্থাপন
অনলাইন বা টেলিফোনের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর সুবিধা চালু করা
বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা
শহরের সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করলেও আরও কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অনেকে মনে করেন, অপরাধীরা এখনো সক্রিয়। বিশেষ করে, রাতের বেলা শপিংমল থেকে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।
শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, “ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। ফুটপাতে দোকান বসানো হলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়, এতে যানজট আরও বেড়ে যায়।”
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “ইভটিজিং বন্ধ করতে আরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো দরকার। দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা ভয় পাবে।”
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের গাফিলতি করা হবে না। জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণও সচেতন হলে অপরাধীরা সুবিধা নিতে পারবে না।”
ঈদকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। শহরের ক্রমবর্ধমান ভিড় ও যানজট সামলাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। জনগণের সচেতনতা এবং প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ একত্রে কাজ করলে ঈদের কেনাকাটা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।