টালিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বড়পর্দায় অভিষেক হয় ‘শ্বেত পাথরের থালা’ সিনেমা দিয়ে। সেই থেকে ৩০ বছর কাজ করে চলেছেন তিনি। এর মধ্যেই প্রযোজক হিসেবেও পথচলা শুরু হয়েছে অভিনেত্রীর।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সিনেমা ‘পুরাতন’। আর এ সিনেমাতে তিনি অভিনেত্রী ও প্রযোজকও। এ সিনেমা বক্স অফিস ও দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সিনেমায় বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের কন্যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা। প্রযোজক হিসেবে তার পর্যবেক্ষণ কী?—একটি গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের উত্তর মুম্বাই থেকে ফোনে শেয়ার করে নিলেন অভিনেত্রী।
প্রযোজক হিসেবে নিজের উপলব্ধি জানালেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তথাকথিত বড় প্রযোজনা সংস্থা নেই। পরিচালক সুমন ঘোষও দীর্ঘ দিন টানা পরিচালনা করছেন, এমন নয়। তা-ও ‘পুরাতন’ সিনেমা দর্শক ফেরাবে না— এই বিশ্বাস ছিল ঋতুপর্ণার।
অভিনেত্রী বলেন, প্রথম থেকেই আমি একটা কথা বলেছিলাম। এ সিনেমা শুধু আমার একার নয়। এটা আমার তরফ থেকে বাংলা সিনেমার জগৎকে দেওয়া একটা উপহার। শুধু আমার বা প্রযোজনা সংস্থা নয়। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কাছেই এ সিনেমা বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, শর্মিলা ঠাকুর আবার বাংলায় ফিরলেন এ সিনেমার মাধ্যমে। এই সিনেমার মাধ্যমে সুমনও নিজের পরিসর বড় করতে পেরেছেন। সাধারণত প্রযোজনা সংস্থা নিজেদেরই প্রচারে রাখে। কিন্তু আমি পরিচালককে সেই জায়গা দিয়েছি।
কলকাতায় গত সাত দিনে প্রেক্ষাগৃহগুলো প্রায় ভর্তি থেকেছে। বর্তমানে সিনেমার প্রচার নিয়ে মুম্বাই শহরে ব্যস্ত তিনি। এই সাফল্য নিয়েও গভীর উপলব্ধি রয়েছে তার। ঋতুপর্ণা বলেন, আমি সবসময়ই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। আমার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে অনেকে অনেক কিছু বলেছেন— কোনটা করা উচিত, আর কোনটা উচিত নয়। তিনি বলেন, তবে আমি আমার লক্ষ্য থেকে কখনো সরে আসিনি। বক্স অফিসের সাফল্য তো রয়েছেই। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, দর্শক ‘পুরাতন’-কে ফেরাবে না।
সিনেমা মুক্তির পর প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সিনেমা দেখার পর বহু দর্শকের চোখে জল দেখেছেন অভিনেত্রী। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন অনেকেই। অভিনেত্রী ও প্রযোজক হিসেবে এটাই তার কাছে বড় প্রাপ্তি বলে জানান ঋতুপর্ণা।
তিনি বলেন, তবে এই প্রথম নয়; এর আগে ‘আলো’ সিনেমার সময়ও এমন প্রতিক্রিয়া ছিল দর্শকদের। ‘আলো’র মতো আর একটি সিনেমার কথা আজও অনেকেই বলেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘আলো’ সিনেমার প্রযোজনার পর নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘ইচ্ছে’ সিনেমাতে পরিবেশক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ‘ইচ্ছে’ সিনেমাই কিন্তু নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
এ ছাড়া ‘ভালোবাসার বাড়ি’ ও ‘আহারে’ সিনেমাতেও সহপ্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন অভিনেত্রী। একদিকে অভিনয়, আরেকদিকে প্রযোজনা। ঋতুপর্ণা বলেন, আসলে আমি কখনই অন্যের ক্ষতি করে কিংবা অন্যকে ছোট করে বড় হওয়ার চেষ্টা করিনি। অন্যকে সরিয়ে নিজে কাজ করতে চাইনি। বরং আমি কারও জন্য কিছু করতে পারলে, ভালো বোধ করি। আমি জোট বেঁধে কাজ করায় বিশ্বাসী।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আরও একটি সিনেমা— ‘অন্নপূর্ণা’। সিনেমার প্রস্তাব আগে গিয়েছিল ঋতুপর্ণার কাছে। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও অভিনেত্রী বলেন, আমি বলেছিলাম কাজটা করতে পারব না। আমিই বলেছিলাম— তোমরা অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে নাও।
শুধু অনন্যাই নন; বহু সিনেমাতেই অভিনয়ের জন্য অন্যদের নামের প্রস্তাব দিয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এটাই তার স্বাভাবিক প্রবণতা। দীর্ঘ দিন কাজ করার সুবাদে, তিনি কোনো একটা জায়গায় পৌঁছালেও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আসা নতুন মুখকে তিনি কোনো দিনই ছোট করে দেখেননি। এভাবেই তিনি কাজ করেছেন।