1. info@dailyshadhinbarta.com.bd : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা Shadhin Barta
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
যৌন কেলেঙ্কারির জের: ‘প্রিন্স’ মর্যাদা ও রাজপ্রাসাদে ঠাঁই হারাচ্ছেন অ্যান্ড্রু যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ২৪ হাজার টন ত্রাণ পৌঁছেছে: জাতিসংঘ প্রবাস নয়, দেশেই ‘কমলা’ চাষে ভাগ্য বদল শার্শার আবু হানিফের কাশি দিয়ে ধরা পড়লেন, খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতি চক্রের ৩ সদস্য আটক যশোরে ফের ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার স্বর্ণসহ পাচারকারী আটক নেত্রকোনায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন নভেম্বর মাসে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান — প্রস্তুত বিএনপি ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ, শিকারে নামতে প্রস্তুত জেলেরা সময় এসেছে পরিবর্তনের: জাতিসংঘকে তাল মেলাতে হবে, বললেন ড. ইউনূস নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণ ও ‘বিদেশি চাপ’ নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব

নেত্রকোণার যে কৃতী সন্তানকে ভুলতে বসেছে একবিংশ শতাব্দী

ইকবাল কবির, জেলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের পাইকুড়া (কানিবাগ) গ্রামে জন্মেছিলেন এক কিংবদন্তী শিক্ষাবিদ, যিনি কালের স্রোতে হয়তো তাঁর জন্মভূমিতে প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। কিন্তু তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো আজও ‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ শহরের শিক্ষার ভিত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আর কেউ নন- কীর্তিমান শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

​ব্রিটিশ ভারতের ৩০এর দশকে যখন উচ্চশিক্ষার জন্য এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঢাকায় যেতে হতো, তখন এই স্বপ্নবান মানুষটিই নারায়ণগঞ্জ শহরের শিক্ষাব্যবস্থার বাতিঘর হয়ে ওঠেন।

শিক্ষাজীবন ও নারায়ণগঞ্জে আলোর যাত্রা:
​নেত্রকোণার মাটিতে বেড়ে ওঠা খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে এমএ ডিগ্রি এবং আইন বিষয়ে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ‘র‌্যালি ব্রাদার্স’ নামে এক কোম্পানিতে চাকরি সূত্রে নারায়ণগঞ্জে আসেন। তবে শীগ্রই তিনি এই শহরের মানুষের মাঝে শিক্ষার অভাব উপলব্ধি করেন। শহরের মানুষকে ভালোবেসে তিনি চাকরির মায়া ছেড়ে নিজেকে এখানকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর মহৎ কাজে উৎসর্গ করেন।

একক উদ্যোগে একাধিক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান:

অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নিরলস ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জ পায় একাধিক ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।যেমন:

​১. নারায়ণগঞ্জ উইমেন্স কলেজ (১৯৩৭): নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর প্রথম উদ্যোগ, যা বর্তমানে জেলার শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ সরকারি তোলারাম কলেজ নামে পরিচিত।
২. নারায়ণগঞ্জ ল কলেজ (১৯৬৫): এটি ছিল তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এবং পূর্ব পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ল কলেজের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। এই কলেজ থেকে প্রায় ৯ হাজার আইনজীবী তৈরি হয়েছিলেন।
৩. অন্যান্য অবদান: শিক্ষার প্রসারে তিনি নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ এবং গণবিদ্যা নিকেতন-এর মতো প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। এমনকি, এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে তিনি কো-অপারেটিভ ব্যাংক ও শুরু করেছিলেন, যা তাঁর সাংগঠনিক দূরদর্শিতার প্রমাণ।

তিনি ছিলেন মহৎ হৃদয়ের একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। তিনি সারা বছর বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোতে অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও কাজ করেছেন, যিনি শিক্ষার মাধ্যমেই একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।

একবিংশ শতাব্দীতে বিস্মৃতির আক্ষেপ:
​অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এই বিশাল অবদান সত্ত্বেও, একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে এসে নেত্রকোণার ইতিহাসে কৃতিত্বপূর্ণ নামের তালিকায় তাঁকে খুঁজে না পাওয়ার আক্ষেপ রয়ে গেছে।

তাঁর নাতি জহর চক্রবর্তী, যিনি বর্তমানে নেত্রকোণা সদর – মোক্তারপাড়ায় বসবাস করেন, এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে বলেন, “দাদুর (অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) এমন বিশাল কাজ সত্ত্বেও নেত্রকোণার স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় তাঁকে সেভাবে স্মরণ করা হয় না। নারায়ণগঞ্জ তাঁকে সম্মান করলেও, জন্মভূমি তাঁকে ভুলতে বসেছে।”

স্থানীয় পর্যায়ে অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।

সেই প্রসঙ্গে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা পাইকুড়া ইউনিয়নের, সাবেক চেয়ারম্যান ও এডভোকেট মরহুম নুরুল ইসলাম ভুঞা সাহেবের ছোট ভাই বিশিষ্ট সমাজ সেবক – মোঃসাইফুল ইসলাম ভুঞা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্যারের ছাত্র ছিলেন আমার বড় ভাই , যিনি ১৯৬৬ সালে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।” তাঁর মতো হাজারো ছাত্রের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু।

​নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বিও আফসোসের সুরে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শিক্ষিত করতে যদি কারো একক অবদানের কথা বলতে হয়, তাহলে তিনি খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অথচ আমরা তাঁকে ভুলতে বসেছি।”

​স্মৃতি, স্বীকৃতি ও ব্যক্তিগত সংযোগ
​এই মহৎ প্রাণপুরুষ ১৯৭৮ সালের ১৮ আগস্ট অনন্তলোকে পাড়ি জমান। তাঁর এই মহৎ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ – নারায়ণগঞ্জের সুধীজন পাঠাগার ২০০৫ সালের ৩১ জুলাই ‘অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মারক গ্রন্থ’ প্রকাশ করে।
​উল্লেখ্য যে, উনার জন্ম স্থানের স্থানীয় পর্যায়ে অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।

অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবন বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণার উৎস। নেত্রকোণার এই কৃতি সন্তান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শিক্ষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন এবং একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়তা করেছেন। শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকব

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
LICENCE NO- TRAD/DSCC/210965/2019 and applied for registration.
Community Verified icon
 

Community Verified icon