 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নেত্রকোনার গ্রামীণ জনজীবন, যা এখন এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। অসহনীয় গরমের মাঝে দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না, রাতেও মিলছে না স্বস্তি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকদের হাতে উচ্চমূল্যের ‘ভুতুড়ে বিল’।
জেলার ১০টি উপজেলাই এই সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বর্তমানে জেলার ১৫৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৬ মেগাওয়াট, যার ফলে চরম লোডশেডিংয়ে জনজীবন স্থবির।
দৈনন্দিন জীবনে চরম প্রভাব:
গ্রামীণ এলাকার তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোনার গ্রামগুলোতে দিনে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে, কখনও কখনও তা আরও কম। দীর্ঘ লোড-শেডিংয়ের কারণে রাতে মানুষজন নির্ঘুম সময় কাটাচ্ছেন। এই সংকটে স্থানীয়দের জীবিকা ও রুজি-রোজগার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দুগ্ধ খামারিরা জানিয়েছেন, গরমে পশু-পাখি অস্থির হয়ে পড়ছে এবং তাদের ঠান্ডা রাখতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় লোকসানের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া, ঘন ঘন লোড-শেডিংয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে শিশুদের শিক্ষায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
ভুতুড়ে বিলের বোঝা:
জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সংকট সবচেয়ে চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকেরও কম। অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সত্ত্বেও গ্রাহকরা প্রতি মাসে অতিরিক্ত ও অবাস্তব বিল পাওয়ায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিদ্যুৎ না পেয়েও তাদের বাড়তি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কেন্দুয়া উপজেলার বেশ কিছু ভুক্তভোগী গ্রাহক তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, “সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না, রাতেও আসে-যায়। অসহ্য গরমে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে আবার মাসের শেষে আকাশছোঁয়া বিল হাতে আসছে। বিল না দিলে সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই, অথচ বিল দিতে হচ্ছে! এই জুলুম আর কতকাল চলবে?”
বিলিং সমস্যার জন্য নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রায় ৪০,০০০ ত্রুটিপূর্ণ মিটারকে দায়ী করেছে। কেন্দুয়াতেই প্রায় ৮,০০০ ত্রুটিপূর্ণ মিটার পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য ও এলাকাবাসীর দাবি:
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সংকটের মূল কারণ হলো ময়মনসিংহের মওনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাস পাওয়া। তবে, এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। এই তীব্র সংকটের মুখে এলাকাবাসী দ্রুত এর থেকে মুক্তি চাইছেন।
নির্ঘুম রাত, জীবিকার ক্ষতি এবং অতিরিক্ত বিলের বোঝা থেকে বাঁচতে তারা কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা অবিলম্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং অযৌক্তিক ‘ভুতুড়ে বিল’ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট উচ্চমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।