এখন পর্যন্ত আমরা কোন রাজনৈতিক জোট করিনি। আগামী নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদ এককভাবে ট্রাক প্রতিকে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানান ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর বলেছেন,
তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে “জুলাই বিপ্লব ও নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে জন আকাঙ্খার রাজনীতি” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আলো বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার, মেয়রগণ সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবে।
তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, মাফিয়ারা রাজনীতিকে যেভাবে গ্রাস করেছে, আজকে ডাকসু, চাকসুসহ সকল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ছাত্র রাজনীতি এবং ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেয়া হয় তাহলে পরিচ্ছন্ন তরুণ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
বিগত সময়ের ইতিহাস তুলে ধরে নূর বলেন, দলীয় সরকার অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবখানে কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স সিলমারা, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদেরকে মাথা ফাটিয়ে দেয়া, হামলা করা হয়েছে। তিনি সব দলকে স্থানীয় নির্বাচনের প্রশ্নে এক হওয়ার আহবান জানান।
তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, আপনারা যদি ভেবে থাকেন, কোন বিশেষ দল ক্ষমতায় আসছে, তাদের সাথে খাতির করে তাদের নিয়ে কাজ করি। ভুল করবেন। কে ক্ষমতায় আসবে এটা এখনই কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার দলের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্যে বলছেন, আমরা ক্ষমতা নাই বন্ধুগন। আমরা ক্ষমতায় যাবো কিনা জানিনা। তাহলে অন্যরা কিভাবে বলে। আপনারা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনই বৃষ্টি যেদিকে ছাতা সেদিকে ধরা শুরু করেছেন। এরকম একটা মনোভাব দেখাচ্ছেন এটা ঠিক না।
নূর বলেন,আজকে আমরা রাজনীতিবিদদের লুটপাট দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছি। হাসিনার ফ্যাসিবাদের কথা বলছি। হাসিনার ফ্যাসিবাদী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি এদেশের আমলাতন্ত্র এই প্রশাসন। এসপি বলেন ডিসি বলেন, তারা বহাল তবিয়তে আছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যুবলীগ, দেশ ছাড়ছে। তাদের অনেকের মধ্যে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়জন এসপি-ডিসি গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়জন ইউএনও, ওসি গ্রেপ্তার হয়েছে। এই ওসি, ডিসি ইউএনও এসপিরা হাসিনার আকাম, কুকাম এর সহযোগী ছিল। হাসিনার বিচারের পাশাপাশি প্রশাসনের মধ্যেও যারা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিবাদেও দোসর ছিলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন, তাদেরকে বিচারে মুখোমুখি অবশ্যই করতে হবে।
তিনি বলেন, এই গণহত্যার প্রধান মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনাকে যদি বিচারের মুখোমুখি করা না যায়, তাহলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। পরিষ্কারভাবে আমরা সরকারকে বলছি, আপনাদেরকে ভারতের সাথে শক্তভাবে দেন -দরবার করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে এ গণহত্যার মাস্টারমাইন হিসেবে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পৃথিবীর বুকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যে ফ্যাসিবাদের পরিণতি এই।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওবায়দুল কাদের নাকি সাড়ে তিন মাস দেশে ছিলেন। অথচ আমরা টেরই পেলাম না। অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লবের পরে সবকিছু আইন সংবিধান নিয়ম-নীতি দিয়ে হয় না। যারা গুম, খুন হামলা- মামলা জড়িত ছিল, সবগুলোকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করার দরকার ছিল।
তিনি বলেন,”ছাত্রলীগ, যুবলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও চিপায় চাপায় মিছিল করে। আওয়াজ দেয়। কত বড় দুঃসাহস। এখনো তার আওয়াজ দিচ্ছে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আন্দোলনে আমরা যারা অংশীদার নেতা অনেকেই আমরা দল ভারি করার জন্য আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছি। আপনাদেরকে বলব আওয়ামী লীগের পুনবার্সন যারা করছে, তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।
তিনি বলেন, এখনই যদি আমরা বলি, ভোটাধিকারের জন্য আবার ৫ই আগস্ট ঘটাতে হবে। না এটা হতে দেওয়া যাবে না। রাজনীতি দল সুশীল সমাজ সবাই বলছে, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তাহলে কেন আমরা এ সরকারের বিরুদ্ধে এখনই আমরা ভোটের জন্য, নির্বাচনের জন্য আবার আন্দোলন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,আমরা কি সারা জীবন আন্দোলন করবো? আমরা কি রাজপথে শুধু রক্ত দেবো? আমরা কি জীবন দেবো? এই আন্দোলন সংগ্রামে ২০০০ লোক মারা গেছে? কয়জন এমপির ছেলে মারা গেছে। কয়জন মন্ত্রী ছেলে মারা গেছে? কয়জন নেতার ছেলে, মেয়ে, বউ বাচ্চা মারা গেছে? কোন নেতার বউ বাচ্চা ছেলে মেয়ে মারা যায় নাই। মারা গেছে আপনার মত, আমার মত কৃষকের সন্তান। শ্রমিকের সন্তান, রিক্সাওয়ালা গার্মেন্টস কর্মী, ছাত্র- জনতা নেহায়েত সাধারণ মানুষ।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রূপ মিয়া হোসাইন রাজ, আইনজীবী অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান, ঢাকা বারের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মুমিনুল ইসলাম,জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি সোহেল রানা রাফি, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মাসুম আহমেদ, জেলা শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি শিব্বির আহমেদ প্রমুখ।