নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের গোগ গ্রামে এক বিধবা নারীর কাছ থেকে অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেশী এক যুবক মানব পাচারের প্রলোভন দেখিয়ে এই জঘন্য কাজটি করেছে বলে জানা যায়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার কেন্দুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোগ গ্রামের রূপনেহার আক্তার (৪৪) নামের এক বিধবা নারী তার দুই মেয়ের (গার্মেন্টস কর্মী) উপার্জিত প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘরের ট্রাঙ্কে জমিয়ে রেখেছিলেন। এই টাকা দিয়ে ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল তার। এরই মধ্যে প্রতিবেশী যুবক রবিন (২০) রূপনেহারের ১৩ বছর বয়সী ছেলে আশরাফুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
এরপর রবিন শিশুটিকে কানাডা পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। তার কথায় আশরাফুল এক রাতে মায়ের খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। মা অচেতন হয়ে পড়লে আশরাফুল কোমর থেকে চাবি নিয়ে ট্রাঙ্ক খুলে সব টাকা রবিনের হাতে তুলে দেয়। টাকা পাওয়ার পর রবিন আশরাফুলকে তার নিজের পুরোনো মোবাইলটি ১৬ হাজার টাকায় দিয়ে বলে যে, কানাডা থেকে এই নম্বরেই যোগাযোগ করা হবে।
পরদিন সকালে রবিন আশরাফুলকে কেন্দুয়া বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায় এবং একটি অচেনা নম্বর দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। ঢাকায় পৌঁছানোর পর শুরু হয় প্রতারণার মূল পর্ব। রবিন কর্তৃক দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি চক্র আশরাফুলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে। এই চক্র শিশুটিকে দিয়ে চারদিনে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা কয়েকটি বিকাশ নম্বরে পাঠাতে বাধ্য করে।
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর রবিন আবারও ঢাকায় গিয়ে আশরাফুলের কাছ থেকে পুরোনো মোবাইলটি ফেরত নেয় এবং সব তথ্য মুছে ফেলে। পরে একটি নতুন মোবাইল কিনে দিয়ে তাকে একা রেখেই বাড়ি ফিরে আসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরিবার আশরাফুলকে উদ্ধার করলে পুরো ঘটনাটি সামনে আসে।
স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ হলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় রূপনেহার আক্তার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রবিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় দরবারি মুকুল মিয়া জানান, তাদের কথায় অসঙ্গতি থাকায় ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দুয়া থানার সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এই জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।