শহরের যানজট নিরসনের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নেত্রকোণার বাইপাস সড়কটি এখন এক নতুন পরিচয় পেয়েছে—এটি এখন স্থানীয়দের জন্য একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। দীর্ঘ চার বছর ধরে চলা নির্মাণকাজের ধীর গতির কারণে পুরোপুরি চালু না হলেও, এই সড়কটি প্রতিদিন বিকেল হলেই হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এক অপ্রত্যাশিত মিলনমেলা। প্রকল্পের ধীর গতি, মানুষের স্বস্তি ২০১৯ সালে নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শুরু হয়ে বাংলা এলাকা ও চল্লিশা পর্যন্ত বিস্তৃত এই ১৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়কটির কাজ শুরু হয়েছিল।
এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শহরের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা এবং সুনামগঞ্জ থেকে আসা ভারী যানবাহনের চাপ কমানো। তবে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। কর্তৃপক্ষের আশা, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে।
এই দীর্ঘসূত্রতার কারণেই সড়কের কিছু অংশ এখনো অসম্পূর্ণ। কিন্তু এই অসম্পূর্ণতাই স্থানীয়দের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, শান্ত ও নির্মল পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে ভিড় করছেন। পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীরা হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং এবং ছবি তোলার জন্য এই স্থানটিকে বেছে নিচ্ছেন।
নতুন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র মানুষের এই ভিড়কে কেন্দ্র করে বাইপাস সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অস্থায়ী খাবারের দোকান ও ছোটখাটো ব্যবসা। এতে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। শহরের ভেতরে বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, এই বাইপাস সড়কটি শহরের মানুষের জন্য একটি স্বস্তির ঠিকানা হয়ে উঠেছে।
এটি এখন শুধু একটি নির্মাণাধীন প্রকল্প নয়, বরং নেত্রকোণার অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদিও এটি স্থানীয়দের জন্য আনন্দের উৎস, সচেতন মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, নির্মাণাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এভাবে মানুষের ভিড় বাড়লে তা যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
তাই দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। নেত্রকোণার বাইপাস সড়ক এখন একই সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এক জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র—এই দুই পরিচয়েই পরিচিত। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে এটি শুধু যাতায়াতই সহজ করবে না, বরং এই অঞ্চলের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।