প্রাণহানি ঘটছে হাজারে হাজার। আমরা সবাই জানি করোনাভাইরাস এর আপাতত কোন সুনির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, যদিও গবেষণা চলছে প্রতিনিয়তই। তবে আক্রান্তের হার অনেক অনেক বেশি হলেও মৃত্যুর হার সেই তুলনায় কম।
মূল কথা হচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে সবাই কিন্তু প্রাণ হারাচ্ছেন না! বেচে ফিরছেন অধিকাংশই। প্রশ্ন হচ্ছে কারা বেশি আক্রান্ত বা মৃত্যুর ঝুকিতে রয়েছেন? যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যারা আগে থেকেই কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন যেমন ঃ এজমা বা হাপানি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সার অথবা বয়োবৃদ্ধ.
বাংলাদেশে মধ্যবয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের ভালো তারা আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঝুকি অনেক কম!
তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যেহেতু নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, তাই ইমিউনিটি ( immunity) বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
আমরা কিছুটা সচেতন হয়ে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চললেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারি।
প্রথমেই আসি খাদ্যাভ্যাসেঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা( WHO), World Food Programme ( WFP ), ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বারবার প্রদত্ত গাইডলাইনে ভিটামন – সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলা হচ্ছে। যেমনঃ লেবু, পেয়ারা, আমলকি, কমলা, টমেটো, কাচা মরিচ, জাম্বুরা, আমড়া, শাক সব্জি।
প্রতিদিন কমপক্ষে এক প্রকারের ফল এবং ২ রকমের শাক সব্জি খেতে পারলে খুব ভালো হয়।
এরপর জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে ঃমাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বীজ জাতীয় খাবার যেমনঃ ডাল, শিমের বীচি,গম জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে সবুজ শাক সব্জি যেমন- পালংশাক, ব্রুকলি,শিম, ফল- কলা, মাছ- সামুদ্রিক মাছে যেমন ঃ টুনা মাছ।
পূর্ণ পুষ্টি পেতে হলে সবজি গুলো বড় টুকরো করে অল্প সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
অপরদিকে মাংস আর ডিম অবশ্যই বেশি তাপে খুব ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে।
পানিঃ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে।
গরম পানি পান করতেই হবে এমন কোন বিধিনিষেধ নেই ।
যা বর্জন করতে হবেঃ যেকোন প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, চিপস, টমেটো কেচাপ বা সস ,সফট ড্রিংকস, আর অবশ্যই চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার
আইসক্রিম, চকোলেট। ধুমপান ঃ ধূমপান অবশ্যই বর্জন করতে হবে
দ্বীতীয় বিষয় হলো, জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন বা লাইফস্টাইল মোডিফিকেশনঃ
প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুম খুবই উপকারী। বিশেষ করে রাত ১০ টা থেকে ২ টার মধ্যে যে ঘুম হয় সেটা আমাদের ইমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গভীর রাত পর্যন্ত না জেগে ১০ টার আগেই ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করব নেওয়া ভালো।
ব্যায়ামঃ
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিশেষ করে ফজর নামাজের পর অথবা অন্যান্য ধর্মীয় রীতি শেষে হাটা/ দৌড়ানো। এমনভাবে করতে হবে যাতে শরীরের ঘাম ঝড়ে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন এই কাজ করতে হবে।
সান বাথঃ
সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রোদ আমাদের খুব উপকার করে। শরীরে ভিটামিন – ডি তৈরিতে এটা খুব দরকারি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আপনি ২০ মিনিট রোদে বসে থাকতে পারেন।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ পরিহারঃ
মানসিক চাপ বা ভয় বা আতংক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আমরা নানাভাবে মানসিক চাপে থাকি। এই স্ট্রেস আমাদের কমাতেই হবে।মানসিক চাপ কমানোর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে পূর্ণ মনযোগ বা খুশু খুজুর সাথে নামাজ আদায় করা, আরও আছে নিয়মিত ইয়োগা চর্চা, মেডিটেশন বা ধ্যান।
যা না বললেই নয়ঃ
“আমার করোনা হবে না/ হতে পারে না”- এই ধরনের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সরকারি নির্দেশ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিনা প্রয়োজনে বাইরে অরক্ষিত অবস্থায় ঘুরাঘুরি / আড্ডা/ মেলামেশা / বেড়ানো/ গণজমায়েত করা যাবে না।
মহান স্রষ্টা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
ডাঃ মোঃ আহসান হাবীব আদনান
এমবিবিএস, বিসিএস ( স্বাস্থ্য)
প্রভাষক, প্যাথলজি বিভাগ,
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর।