মৌলভীবাজার শহরের হৃদয় কাঁপানো এক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। শমসেরনগর রোডের সিএনজি স্ট্যান্ডসংলগ্ন ‘এফ রহমান ট্রেডিং’ নামের দোকানে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ঘটে যায় ভয়াবহ এ ঘটনা। দোকান মালিক শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল (৫৫) নামাজ শেষে দোকানে ফিরতেই এক অচেনা যুবক ক্রেতা সেজে প্রবেশ করে। রঙ কেনার কথা বলার মুহূর্তেই বের করে ধারালো ছুরি। প্রতিরোধ করতে চাইলে রুবেলকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ী লুটিয়ে পড়েন রক্তাক্ত মেঝেতে।
হত্যাকারী পালিয়ে যায় দোকানের ক্যাশ থেকে মাত্র ১,১০০ টাকা নিয়ে। এমন নগণ্য টাকার জন্য প্রাণ দিতে হলো রুবেলের মতো একজন সৎ ব্যবসায়ীকে—এ ঘটনায় হতবাক পুরো শহর। ঘটনার পর নিহতের পরিবার সদর থানায় মামলা দায়ের করলে নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ।
পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা’র নির্দেশে একাধিক টিম মাঠে নামে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা, আবুল খায়ের ও জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ শুরু করেন। হত্যার পর পালানোর সময় ভাড়া দেওয়া এক অটোরিকশাচালককে শনাক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পায় পুলিশ। পাশাপাশি ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণে সন্দেহভাজনের ছবি হাতে আসে তদন্তকারীদের।
অবশেষে ১৭ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েল ওরফে আলিফ (২২)। গ্রেফতারের সময় তার হাতে থাকা ব্যান্ডেজই পুলিশকে নিশ্চিত করে দেয় সে-ই রুবেল হত্যার নেপথ্যের খুনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুহেল জানায়, একসময় মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও বর্তমানে বেকার ও হতাশাগ্রস্ত। পরিবারও চরম অর্থকষ্টে জর্জরিত। সেই হতাশা থেকেই অপরাধের পথে পা বাড়ায়। ৬ আগস্ট সুযোগ না পেয়ে ৭ আগস্ট আবার শহরে ফিরে আসে। নিরিবিলি দোকান খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে রুবেলের দোকানেই নৃশংস পরিকল্পনা কার্যকর করে।
তদন্তে হত্যার সময় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি, আসামির মাস্ক-জুতা, রক্তমাখা ১০ টাকার নোটসহ একাধিক আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনা পুরো ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, “মাত্র এক হাজার টাকার জন্য প্রাণ দিতে হবে—এ কথা ভাবতেই শিউরে উঠতে হয়।” শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিনতাই হলেও তদন্ত চলছে সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য। দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে পুলিশ।