মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ তুমুল পারিবারিক বিতর্কের মধ্যে বান্দরবানের লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বেগম নুর-এ-জান্নাত রুমিকে রংপুর বদলি করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শেখ রাসেল হাসানের স্বাক্ষরে ১৪৭ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লামার ইউএনও বেগম নুর-এ-জান্নাত রুমিকে ইউএনও হিসাবে রংপুর বিভাগের কোনো উপজেলায় পদায়ন করে নিয়োগ দেয়ার জন্য তার চাকরি রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট ন্যস্ত করা হয়। একই আদেশে একই পদমর্যাদার আরও ২ জন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাকে অনুরূপভাবে বদলি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ আগস্ট রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভ‚ঞা স্বাক্ষরিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ জারী করেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন মোছাঃ নূর-এ-জান্নাত রুমি। গত বৃহস্পতিবার সকালে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে তিনি দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মোঃ আব্দুল কাদের‘র স্থলাভিষিক্ত হলেন।
নবাগত ইউএনও মোছাঃ নূর-এ-জান্নাত রুমি ৩০তম বিসিএসে (প্রশাসন) ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ২০১২ সালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পরপরই বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এর পরপরই বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, পুর্বের ইউএনও‘র সুচিত কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করতে চান। উলিপুর উপজেলাকে নতুন রূপে সাজানোর কথাও জানালেন নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নূর-এ-জান্নাত রুমি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বেগম নুর-এ-জান্নাত রুমি
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১১ জুলাই লামা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ৭ জুলাই নিজের তালাক দেয়া স্বামীর বিরুদ্ধে লামা থানায় তিনি এ জিডি দায়ের করেন।
ইউএনও নূর-এ-জান্নাত রুমি জিডিতে উল্লেখ করেন, সাংসারিক মনোমালিন্য এবং কর্মস্থলে অন্যায়ভাবে প্ররোচিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রলোভনপূর্বক হুমকি ধামকি প্রদর্শন করায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে গত ২৪ জুন রাতে আমার স্বামী এটিএম ওমর ফারুককে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মৌখিকভাবে তালাক দেই।
এতে সে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে আমাকে হত্যা করবে অথবা নিজে আত্মহত্যা করে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। পরে ৬ জুলাই আমি তাকে ডাকযোগে রেজিস্টার্ড এডি সহকারে তালাকনামা প্রদান করি। তালাকনামা পেয়ে ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে সে আমার লামা উপজেলা সরকারি বাসভবনে এসে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারতে আসে।
এ সময় আমার চিৎকার শুনে ঘরের কাজের বুয়া সেখানে উপস্থিত হলে কোনো রকম প্রাণে বেঁচে আমার সন্তানকে নিয়ে অন্য রুমে চলে যাই।
জিডিতে আরও উল্লেখ করেন, পরে সে সময় সুযোগ বুঝে আমাকে মেরে পঙ্গু করবে বা নিজে আত্মহত্যা করে আমাকে ফাঁসাবে এমন হুমকি দিয়ে চলে যায়। সে আমার সন্তান রাহিবকে জোরপ‚র্বক আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে লুকিয়ে রেখে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা করবে বলেও হুমকি দেয়।
তাই এ অবস্থায় আমার সন্তানকে বাসায় রেখে কর্মস্থলে যোগদান করা ঝুঁকিপ‚র্ণ হয়ে উঠেছে এবং আমি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি বলে উল্লেখ করেন।
লামার বিদায়ী ইউএনও নূর-এ-জান্নাত রুমির তালাক দেয়া স্বামী এটিএম ওমর ফারুক বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। তাদের এ পারিবারিক ঘটনা ছিল কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলোচিত বিষয়।