1. info@dailyshadhinbarta.com.bd : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা Shadhin Barta
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
লোহাগাড়ায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জালিয়াতি চক্রের তিন সদস্য আটক রিজিয়া পারভীনের সঙ্গে মঞ্চ মাতালেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিল্পী সেলিম ইব্রাহিম ২য় বারেও ব্যর্থ! মনির খানের আসনে নতুন মুখ মেহেদী হাসান রনি ‘সবাইকে নিয়েই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই’ – দেশে ফিরেই জামায়াত আমীরের আলটিমেটাম নির্বাচনে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক পেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের খবর ভুয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকায় আসছেন ড. জাকির নায়েক, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মন্তব্য কি কালিয়াকৈর-ধামরাই সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: কান্দাপাড়ায় ঝরল এক প্রাণ সীমান্তে ফের বড় সাফল্য, ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণসহ চোরাচালান জব্দ করল ৪৯ বিজিবি অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি পাকিস্তান-আফগানিস্তান: তুরস্কের ঘোষণা

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সকালেও থামেনি আগুন

আব্দুল্লাহ মুরসালিন, ভ্রাম্যমান [ঢাকা] প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

পলাতক শেখ হাসিনার লাইভ ভিডিওকে কেন্দ্র করে গতকাল থেকেই ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলছে। আজ সকালেও ৩২ নম্বরের বাড়িতে আগুনের লেলিহান শিখায় জলছে চারপাশের সমস্ত কিছু। ছাত্র-জনতা এক হয়ে ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি প্রায় ধ্বংসস্তপে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্তির দিনে বুধবার রাত ৮টার পর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের প্রতিবাদে সেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে জনতা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং লাঠিসোঁটা ও শাবল দিয়ে বাড়ির বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর চালায়। কেউ কেউ দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন, জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ খুলে নিয়ে যান। বিক্ষোভকারীদের মুখে ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই কর’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’—এমন স্লোগান শোনা যায়।

বিক্ষোভের মধ্যে অনেক দর্শকও ছিল, যারা বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছিলেন, মোবাইলে ছবি তুলছিলেন বা ভিডিও করছিলেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। এবারও ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মতো যা কিছু ছিল, তাতে আগুন দেওয়া হয়। বাড়ির পাশের একটি ভবনেও আগুন লাগে।

কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া একজন বলেন, “বুলডোজার দিয়ে আমরা আজ স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দেব।”

রাত পৌনে ১১টার দিকে বিক্ষোভের মধ্যে সেখানে একটি ক্রেন পৌঁছায়। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। ক্রেনে উঠে অনেকে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর আসে একটি এক্সক্যাভেটর।

রাত সোয়া ১১টার দিকে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঘণ্টাখানের মধ্যেই তিনতলা বাড়ির একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত সোয়া ১টার পর ভাঙার কাজে কিছুটা বিরতি দেওয়া হয়।

এর আগে ৩২ নম্বর বাড়ির উল্টো পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে গত জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে সেখানে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, “আমরা আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র দেখাচ্ছি। যাদের ভাঙার আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চায়, তাদের সুযোগ দিন।”

বিক্ষোভের কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও রাস্তার ওপর দুটো পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের পরিস্থিতির মধ্যেই ধানমন্ডি ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয়। খুলনার ময়লাপোঁতা এলাকায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নাটোরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।

যশোরে এক দল যুবক প্রথমে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ভাঙচুর করে। এরপর তারা জেলা পরিষদ চত্বরে মুরাল ও পতিত সরকারের সময়ে নির্মিত পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধক হিসেবে থাকা শেখ হাসিনার নাম ফলক ভেঙে ফেলে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও কামারুজ্জামান হলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেওয়া হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্তির দিনে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা এবং গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাতেও কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের স্বাধীনতা কয়েকজন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলবে, এই শক্তি তাদের হয়নি। তারা একটি দালান ভেঙে ফেলতে পারবে, কিন্তু ইতিহাস মুছতে পারবে না। ইতিহাস কিন্তু প্রতিশোধ নেয়।”

তিনি আরও বলেন, যারা ওই বাড়িতে ভাঙচুর করছে, তারা ‘হীনমন্যতার পরিচয়’ দিচ্ছে।

“বাড়িটার কী অপরাধ? ওই বাড়িটাকে কেন এত ভয়? আমি দেশের মানুষের কাছে আজ বিচার চাই। বলেন আপনারা, আমি কি আপনাদের জন্য কিছুই করিনি?”

সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি কোনো ‘রাগ বা অভিযোগ’ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা তো খুনি হিসেবে চিহ্নিত হবে।”

তিনি বলেন, “দেশের মানুষের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা ফ্যাসিবাদী, না যারা মানুষকে উন্নত জীবন দেয়, তারা ফ্যাসিবাদী? এটা দেশের জনগণই বিচার করবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এখান থেকেই তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে শুরুতে তাকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পর শেখ হাসিনা বাড়ির মালিকানা পান, তবে তিনি সেখানে থাকেননি।

পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেদিন গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাজারো মানুষ প্রবেশ করে।

ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেদিনই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়ে যায় তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
LICENCE NO- TRAD/DSCC/210965/2019 and applied for registration.
Community Verified icon
 

Community Verified icon