আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর এবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলার চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটির জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. ইয়ামীর আলী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মৌলভীবাজারে জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও তীব্র করে তুলবে। অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক শক্তি এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলটি নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চাইছে। চারটি আসনেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের অভিজ্ঞ ও নিবেদিত নেতাদের, যা দলটির নির্বাচনী কৌশলের পরিপূর্ণ প্রতিফলন।
ঘোষিত প্রার্থীরা:
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ি) – মাওলানা আমিনুল ইসলাম
জেলার মজলিশে শুরা ও কর্মপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে পরিচিত মুখ। সমাজ সংস্কার ও শিক্ষার প্রসারে তার ভূমিকা প্রশংসিত, যা তাকে এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরছে।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) – ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী
জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী ইসলামী রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। পেশাগত দক্ষতা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মিশেলে তিনি এই আসনে দলীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
মৌলভীবাজার-৩ (রাজনগর ও সদর) – মো. আব্দুল মান্নান
সাবেক জেলা আমীর এবং সিলেট আঞ্চলিক টিমের সদস্য মো. আব্দুল মান্নান ইসলামী রাজনীতিতে সুপরিচিত। রাজনগর ও সদরে তার দীর্ঘদিনের সংগঠনিক ভিত্তি এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপযোগী করেছে।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) – এডভোকেট মো. আব্দুর রব
সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মো. আব্দুর রব পেশাগত জীবনে একজন সফল আইনজীবী। সমাজসেবা ও আইনজীবী হিসেবে তার পরিচিতি তাকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে দলটির পুনরুজ্জীবন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে। অন্যদিকে, ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাংশ তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করলেও, অন্যদের মধ্যে রয়েছে সংশয়।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, তাদের প্রার্থীরা যদি নির্বাচিত হন, তবে মৌলভীবাজারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। ইতোমধ্যে জামায়াতের নেতাকর্মীরা গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতে ইসলামী যদি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকে, তাহলে এটি অন্য দলগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। সব মিলিয়ে মৌলভীবাজারের নির্বাচনী মাঠ এবার উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ভোটের দিন জনগণের রায় কোনদিকে যায়।