রমজান এলেই বদলে যায় পরিবেশ। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।কোলাহলপ্রবণ ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে প্রশান্তির ছোঁয়া। শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা এখন নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত আর ইফতার আয়োজন ঘিরে।
শনিবার সন্ধ্যায় দেশের আকাশে রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকেই নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ছড়িয়ে পরে।সাধারনত রাতের বেলা আড্ডা, হৈ-হল্লর, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম দেখা গেলেও এখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইবাদত-বন্দেগিতে সময় পার করছে।
রমজানের প্রথম দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দীয় মসজিদে শিক্ষার্থীদের উপস্হিতি বেড়েছে।প্রথম তারাবিহর নামাজ থেকেই মসজিদের কাতার থাকছে ভরপুর। প্রতিদিন এশার নামাজের পর থেকেই ভরে যায় মসজিদ প্রাঙ্গণ।
রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ও হলের রান্নাঘরগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে সেহরির প্রস্তুতিতে।ক্যান্টিনে কর্মরত ব্যাক্তি বলেন শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিষয় মাথায় রেখে সেহরির খাবার প্রস্তুত করা হয়।
রমজানে ক্যাম্পাসের চেনা দৃশ্যের পরিবর্তন এসেছে।সাধারণত সকাল হলে ক্যাম্পাসের টং দোকানগুলোতে আড্ডা আর চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। কিন্তু রমজানে সে দৃশ্য অনুপস্থিত।বিকেল গড়ালেই চিত্র বদলে যায়। শান্তি নিকেতন, পকেট গেট ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানগুলোতে বসে ইফতারের পসরা। মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপিসহ নানা মুখরোচক খাবার সাজিয়ে রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় জমে ওঠে ইফতার বাজার।
সন্ধ্যা নামার আগেই হলের আঙিনা, ক্যাম্পাসের খেলার মাঠ কিংবা ময়না দ্বীপে বসে যায় ইফতার আয়োজন। একসঙ্গে বসে ইফতার করেন শিক্ষার্থীরা। কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো দলবদ্ধভাবে। সম্প্রতি শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে গণইফতার আয়োজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠনগুলো করছে ইফতার মাহফিল।
রমজান শুরুর পর থেকে বদলে গেছে ক্যাম্পাসের প্রতিদিনের রুটিন। অন্য সময় বিকেল হলে টং দোকানে জমে উঠত আড্ডা, উচ্চস্বরে চলত গান। কিন্তু এখন সেখানে নীরবতা। শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা এখন ইবাদত, ক্লাস আর আত্মশুদ্ধির চর্চায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আগে বিকেলে ক্যাম্পাসে আড্ডার জন্য বের হতাম, এখন নামাজ আর কুরআন তিলাওয়াত করি। মনে হচ্ছে, এই পরিবর্তন শুধু রমজানেই নয়, সারা বছর থাকলে ভালো লাগত।”
রমজান উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে। ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারছেন।
রমজান শুধু রোজা রাখার মাস নয়, আত্মশুদ্ধিরও সময়। নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরাও এই শিক্ষাকে ধারণ করছেন। কেউ সময় দিচ্ছেন ইবাদতে, কেউ স্বল্পভাষী হয়েছেন, কেউ চেষ্টা করছেন খারাপ অভ্যাস বদলাতে।
রমজানের শিক্ষা সারা বছর ধরে রাখতে পারলেই জীবন হয়ে উঠবে আরও সুন্দর—এমনটাই প্রত্যাশা করেন শিক্ষার্থীরা।