1. admin@dailyshadhinbarta.com : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা
শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নিরাপদ ও বসবাস যোগ্য ঢাকা গড়তে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার ঘুষ ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিনাজপুরে ২১০ রাউন্ড গুলিসহ ১৭টি আগেন অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে সকল কর্মস্থল থেকে ভারতীয় নাগরিকদের প্রত্যাহারের দাবি জবিতে শত, সাহসি ও যোগ্য ভিসি চান শিক্ষরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই বিএনপির মূল লক্ষ্য: তারেক রহমান যশোরে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে শংকিত জামায়াত দেশনেত্রীর উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাত্রা পেছালো ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে দিতে চেয়েছিলো শেখ হাসিনা: রিজভী ক্ষমতার পালা বদল হলেও বদলাবে না নীতি অবশেষে যশোর বাসির আশা পূরন বেনাপোলে মাদক ব্যবসায়ি জমির বায়নার টাকা আত্তসাতের চেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এতটা অপেক্ষা কেন করতে হয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাককে ৭ দিনের আল্টিমেটাম

বিভিন্ন জেলায় কমেছে নদীর পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি বৃষ্টি কমায় উন্নতির পথে। সিলেটে এখনো পাঁচ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে আগামী তিন দিনের মধ্যে এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

এদিকে, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় কমেছে। তবে তা এখনও বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩২ সেন্টিমিটার পানি কমে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার প্রায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শনিবার (২২ জুন) বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট: পাঁচদিন পর সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। গতকাল সকালে রোদের দেখা পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, সিলেট-সুনামগঞ্জকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে উজান থেকে নেমে আসা পানির পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমে রিজার্ভার করা হবে। যাতে উজান থেকে আসা পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা এবং সুনামগঞ্জের ২০টি নদী খনন করা হবে। এতে করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। শুক্রবার সকালে সিলেট নগরীর ক্বীনব্রিজ এলাকায় সুরমা নদীর পানি দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এদিকে ভেসে ওঠতে শুরু করেছে সিলেট নগরীর প্লাবিত রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি কমছে। পানি কমলেও ৬ পয়েন্টে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে মাত্র ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাবমতে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডে বন্যাকবলিত হয়েছে সাড়ে ৯ লাখের মতো মানুষ। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আশ্রিতরা।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলায় গত ৩৬ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং শুক্রবার আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল থাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপদ ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পৌর শহরের শান্তিবাগ, দক্ষিণ নতুনপাড়া, হাছননগর, সুলতানপুর, আফতাবনগর, কালিপুর এলাকায় মানুষ পানিবন্দি আছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল, শুক্রবার যা বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে থাকায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ির ফিরতে শুরু করেছে। জেলার ছাতক, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এখনও মানুষ পানিবন্দি আছে। বন্যায় মানুষের ধান, গবাদিপশু, ঘরবাড়ির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সুনামগঞ্জের ২ হাজার পুকুরের মাছ। জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলার সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর, দিরাইসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ছোট-বড় ২ হাজার পুকুর তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ২৫০ টন মাছ ও মাছের পোনা ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যচাষিরা, যার আর্থিক মূল্য ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার সহস্রাধিক মাঝারি ও ক্ষুদ্র পর্যায়ের মৎস্যচাষিরা। অনেকেই উপার্জনের মাধ্যম হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহায়তা প্রত্যাশা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের সুফিয়া মৎস্য খামারের মালিক দারু মিয়া জানান, আমার চারটি পুকুরের ১২ লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন জাতের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আমার বসতবাড়িতে থাকা ধান ও পানিতে ভেসে গেছে।

বন্যায় মৎস্যচাষিরা তালিকা করে পুনর্বাসনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, পুরো জেলা বন্যাকবলিত। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সরকার সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করবে।

রংপুর: রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩২ সেন্টিমিটার পানি কমে আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার প্রায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

শনিবার (২২ জুন) সকালে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, তিস্তা সেতু এলাকায় পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানি আরও কমে যাবে। তবে পানি কমলেও ভাঙনের আশঙ্কা আছে।

আজ সকালে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীর কিনারে দেখা যায়। এসব বসতভিটার লোকজন বাড়িঘর কোথায় সরিয়ে নেবেন, তা নিয়ে বিপাকে আছেন।

নদীভাঙন–কবলিত উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় এক মাস আগে ১৮০ মিটার স্থানে নদীর ভাঙন রোধে দুই হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়। স্রোতের তোড়ে বেশির ভাগ বস্তা ভেসে গেছে। আবদুল মালেকের টিনের বাড়ি। চারটি ঘর। ভাঙনের মুখে বাড়িঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। তিনি বলেন, ‘ঘর ভাঙিয়া যে অন্যটে সরে নিয়া যামো, সেই জায়গাও নাই। কারও জমি ভাড়া নেওয়া লাগবে। হাতোত কোনো টাকাও নাই। সেই চিন্তায় ঘুম হয় না।’

বসতভিটা নদীভাঙনের কবলে আছে স্থানীয় বাসিন্দা ফুল মিয়া, সুরুজ আলী, আবেদ আলীসহ আরও অনেকের। বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গদাই গ্রামে প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস। এর মধ্যে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে।

বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। মানুষজন নিস্ব হয়ে পড়ছেন। ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা করা হলেও তা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বালুর বস্তাও নদীতে বিলীন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক মাস আগে এক হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে চেষ্টা চলানো হচ্ছে।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় উজানের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন অবিরাম বর্ষণের সম্ভাবনা থাকায় গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অন্তত ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গাইবান্ধার সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে জেলার চারটি নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ১২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, কাপাসিয়া, হরিপুর ও চণ্ডিপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হতে শুরু করছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদরের মোল্লারচর, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, চণ্ডিপুর, তারাপুর ইউনিয়ন ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। তবে এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান বলেন, জেলা ও উপজেলায় দুর্যোগকালে সভা করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সদরে নদীবেষ্টিত যে চারটি ইউনিয়ন রয়েছে, সেসব ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকায় শুকনা খাবার বিতরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাহিদ রসুল জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগপ্রবণ ৪টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলায় ৫০ ব্যাগ শুকনো খাবার, নগদ অর্থ ১৫ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা করে উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য চারটি রেসকিউ বোট ও ৩৮৪ টন চাল মজুদ রয়েছে এবং স্থায়ী-অস্থায়ী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫০০ টন চাল, ১০ লাখ টাকা (নগদ), পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন, গৃহনির্মাণ মঞ্জুরি বাবদ ৩০ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য ক্রয় বাবদ ১০ লাখ টাকার বরাদ্দের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে আত্রাই, পুনর্ভবা ও ইছামতী-এই প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এতে নদীর তীরঘেঁষা নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে সারা দিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা, আত্রাই ও ইছামতী নদীর পানি বিপদসীমার খুব কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা নদীর পানি বর্তমানে ৩০ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমা ৩৩ দশমিক ৫০০ মিটার। আত্রাই নদীর ৩৯ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমার বিপরীতে বর্তমানে ৩৬ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ইছামতী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২৬ দশমিক ৯৬ মিটারে, যদিও এই নদীর পানি বিপদসীমা হচ্ছে ২৯ দশমিক ৫০০ মিটার।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর জামান নয়ন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি নদীর মধ্যে আত্রাই, পুনর্ভবা ও ইছামতী নদীর পানি বিপদসীমার খুব কাছাকাছি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তবে সারা দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বর্তমানে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে। যদি রাতের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তা হলে নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

এদিকে দিনাজপুর শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীসংলগ্ন শহরের নিম্নাঞ্চল দফতরীপাড়া, বালুয়াডাঙ্গা, হঠাৎপাড়া, লালবাগ, রাজাপাড়ার ঘাট, মাঝাডাঙ্গা, বাঙ্গীবেচা ব্রিজ এলাকা, নতুনপাড়ার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার খুব কাছাকাছি থাকায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার অনেকাংশে ডুবে গেছে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শুক্রবার তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

শুক্রবার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, বেলা ৩টায় দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি সামান্য কমে এখন বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব নদ-নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।

নদীর পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক। অনেকেই কলাগাছের ভেলা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছে। ডুবে গেছে বাদাম, পাটক্ষেত, ভুট্টা, মরিচ ও শাকসবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪৪ টন জিআর চাল এবং নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে ঢাকা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০০ টন চাল।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ওয়েস্ট রিজিওন) এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম উলিপুরের বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, একদিকে বন্যা আবার আরেকদিকে নদী ভাঙন এ জেলার জন্য দুর্ভাগ্য। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর সবই ভাঙনপ্রবণ। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ভাঙনপ্রবণ। নদী ভাঙন প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিরসনে কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায়, তা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2020-2022 Daily Shadhin Barta