1. admin@dailyshadhinbarta.com : দৈনিক স্বাধীন বার্তা : দৈনিক স্বাধীন বার্তা
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ঘুষ ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিনাজপুরে ২১০ রাউন্ড গুলিসহ ১৭টি আগেন অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে সকল কর্মস্থল থেকে ভারতীয় নাগরিকদের প্রত্যাহারের দাবি জবিতে শত, সাহসি ও যোগ্য ভিসি চান শিক্ষরা বাংলাদেশী ইলিশ না পেয়ে বিপাকে ভারতীয়রা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য রেজাউল করিম লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সাড়ে ৪ কোটি টাকা প্রদান করে আশা আজ মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ পহেলা অক্টোবর মধ্যে গুচ্ছ’র ক্লাস শুরুর দাবি সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ নিহত হয়েছে কাজীপাড়া ও মিরপুরের মেট্রো স্টেশন সেপ্টম্বরেই চালু হচ্ছে লোহাগাড়ায় পুকুরে পড়ে তৌছিপ নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে লোহাগাড়াতেও যানজটে অতিষ্ট নগরবাসি সংবাদ প্রকাশের পর জগন্নাথে হলের দখল ছেড়েছে ছাত্রদল

শত লাঞ্ছনা-বঞ্ছনা সহ্য করেও অদম্য একজন পরিশ্রমি নারী জমিলা কসাই

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২

কে বলেছে নারীরা সকল প্রকার কাজ করতে পারে না। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেলেও কসাই গিরি করে চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার। শত লাঞ্ছনা-বঞ্ছনা সহ্য করেও আজ তিনি অদম্য পরিশ্রমি নারী একজন পরিচিত “জমিলা কসাই”। জানা যায়, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে তিনি একমাত্র মহিলা কসাই। কসাইয়ের কাজ করেই চলছে তাঁর সংসার।

ইচ্ছা শক্তি এবং চেষ্টার কারণেই আজ জমিলা একজন সফল মাংস বিক্রেতা এবং সফল ব্যবসায়ী। মায়ের দোয়া নিয়েই কিনেছেন জমি গড়ে তুলেছেন কসাইয়ের দোকান। মহিলা মানুষ হয়ে জমিলা বাজারে কসাইয়ের দোকান দিয়েছেন-এই বলে অন্য কসাইরা প্রথমে বাজার কমিটির কাছে পরে থানা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদেও অভিযোগ করেন। কিন্তু দমে যাননি তিনি।

মায়ের প্রেরণায় জমিলা বেগম (৫০) এখন সফল ব্যবসায়ী। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ‘জমিলা কসাই’ নামে। দিনে তিন-চারটি, শুক্রবারে আট-দশটি গরুর মাংস কেটে বিক্রি করেন তিনি। ব্যবসায়ী জমিলা বেগমের মাংসের ক্রেতা দিনাজপুর জেলাসহ পাশের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এমনকি পঞ্চগড়ের মানুষও।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ৩ নম্বর শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী বাজার। এই গ্রাম্য বাজারের কসাই জমিলা। ২০ বছরের টানা অভিজ্ঞতায় এখন গরুর গায়ে হাত দিলেই বুঝতে পারেন, পশুটি সুস্থ নাকি রোগাক্রান্ত। অসুস্থ গরু শত অভাবে পড়েও কখনো কেনেননি তিনি। ফলে তার কোনো গরু কিনে আনার পর জবাইয়ের আগ পর্যন্ত অসুখে পড়ে কখনো মরেনি।

জমিলা বেগম এখনো নিজে হাটে গিয়ে দেখেশুনে গরু কেনেন। তার ‘মায়ের দোয়া মাংস ভান্ডার’ দোকানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাংস হাঁড় থেকে আলাদা করে বিক্রি করা হয় এখানে। এরপর ডিজিটাল দাঁড়িপাল্লায় মেপে বিক্রি করা করা হয়। বিয়ে বাড়ি, আকিকা, খতনাসহ আশপাশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমিলার দোকানের মাংস যায়। দুই দশকের টানা অভিজ্ঞতায় তিনি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত।

এলাকায় এখন ‘জমিলা কসাই’ নামেই পরিচিত তিনি। নিজের কসাই হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে এ প্রতিনিধিকে জমিলা বলেন, স্বামী কসাই হওয়ায় খুব কাছ থেকে তার কর্মকান্ড দেখা, তাকে সহযোগিতা করা আর সংসারের অভাবই আমাকে এই ব্যবসা শিখিয়েছে। প্রথম দিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কুসংস্কার ছড়িয়ে নালিশ করে আমার ব্যবসা বন্ধ করতে চেয়েছিল অনেকেই কিন্তু মায়ের প্রেরণায় সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমি টিকে আছি।

আত্মবিশ্বাসী জামিলা বলেন, কোনো পেশার পাশে লেখা নেই কোনটা ছেলে করবে, কোনটা মেয়ে করবে। সততার সঙ্গে ব্যবসা করে সফলতা পাওয়াটাই বড় কথা। শতভাগ পেশাদার কসাই জমিলা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে বলেন, প্রতিদিন সকালে মাছি মারার ওষুধ দিয়ে দোকানটি মাছি ও জীবাণুমুক্ত করি। কর্মচারীরা প্রতিদিন নিয়ম করে এই নির্দেশ পালন করে। পাশের দেবারুপাড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক দিয়ে প্রতিটি গরু রোগমুক্ত আছে কি-না পরীক্ষা করা হয়। নিয়ম মেনে গরু মৌলভী দিয়ে জবাই করা হয়।

জানা যায়, চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জমিলা মা-বাবার তৃতীয় সন্তান। বাবা জাকির হোসেন ছিলেন পাইকারী পান বিক্রেতা। অভাবের কারণে লেখাপড়া করা হয়নি। ১৫ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। পাত্র বগুড়ার যার পেশা ছিলো কসাই। বাবার দোকানের পাশেই জমিলার স্বামী রফিকুল ইসলাম ভান্ডারির মাংসের দোকান। বিয়ের পর অবসরে স্বামীর সঙ্গে দোকানে বসতে বসতে চোখে দেখে অনেকটাই কসাইয়ের কাজ শিখে ফেলেন জমিলা। দেড় বছরের মধ্যে সংসার আলো করে ছেলে জহিরের জন্ম হয়।

এরপর দ্বিতীয় সন্তানের কামনা করছিলেন। এরই মধ্যে জমিলা জানতে পারেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত। নেশা করে বাড়িতে এসে নিয়মিত তাকে মারধর করতেন। পরে জানা গেল, তার আরও এক স্ত্রী আছে। বিভিন্নভাবে মানুষের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা ধার করে স্বামী রফিক এক সময় নিখোঁজ হন। এরপর গর্ভবতী জমিলা বেগম তার কোলের সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাবার ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে বাজারে এই জায়গা নিয়ে কসাইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি।

নিজেকে আস্তে আস্তে প্রমাণ করেন মেয়েরাও সব করতে পারেন। ছেলে-মেয়েরাও বড় হয়েছেন। স্বামীর কোনো খোঁজ পাননি জমিলা। মাংস বিক্রির টাকা দিয়েই দোকানের কয়েক গজ দূরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন জমিলা বেগম। জমিলা এখন ১৫ শতাংশ জমির মালিক। ছেলেকে ছোট থেকে ব্যবসায় সঙ্গী করতে হয়েছে বলে লেখাপড়া করাতে পারেননি। তবে মেয়ে সোহাগী আক্তার নবম শ্রেনিতে পড়ে।

সোহাগী আক্তার জানায়, সে ঝাড়বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শুরুতে অনেকেই বলত-তোর মা কসাই, মিশতে চাইত না কেউ কেউ। তবে ভালো ছাত্রী হয়ে সে সমস্যার সমাধান করেছে। জমিলা বলেন, মেয়েকে সময় দিতে না পারলেও সে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কি-না ঠিকভাবে পড়ছে কি-না খবর রাখি। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চাই। যতদিন বাঁচি কসাইয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাব। গেলো কিছুদিন আগেও জমিলা কসাই ‘জয়িতা’ খেতাব পেয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2020-2022 Daily Shadhin Barta