৫২ বছর পর একাত্তরের গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণে দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলবাড়ীর বারাইহাট সংলগ্ন ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত আখিরা বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের ফলক উন্মোচন করা হলো।
৬ নভেম্বর বিকেল ৫টায় উপজেলার বারাইহাটের ১০০ গজ দক্ষিণে আখিরা বধ্যভূমিতে গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ফলক উন্মোচন করেন দিনাজপুর -৫( ফুলবাড়ি – পার্বতীপুর )সংসদীয় আসনের ৭বারের সংসদ সদস্য, প্রাক্তন মন্ত্রী , প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ফলক উন্মোচন শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একাত্তরের স্মৃতি এবং সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।
এলুয়াড়ী ইউনিয়নের আ’লীগের সভাপতি মো. আবু তাহের চৌধুরী সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন – ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন, ভাইস চেয়ারম্যান নিরু শামসুন্নাহার, মঞ্জুরায় চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজার রহমান, দিনাজপুর প্রেসক্লাব, জেলা ক্যাব, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ স্মৃতি সংগ্রহ কমিটির নির্বাহী সদস্য, শহীদ আসাদুল্লাহ স্মৃতি সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ফুলবাড়ী উপজেলা ক্যাবের সভাপতি মাসউদ রানা, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগের জেলা কমিটির তথ্য গবেষণা সম্পাদক গণমাধ্যমকর্মী মো. আশরাফুল আলম প্রমুখ। এ সময় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন ১৭ই এপ্রিল ফুলবাড়ী’র পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ আফতাব গঞ্জের খোশরামপুর, মাদারপুর, বামনগড় ও বালুয়াছড়ানসহ এলাকার প্রায় ৪ শত হিন্দু -মুসলিম, নারী- পুরুষ শিশুসহ জান-মাল ও ইজ্জত রক্ষার জন্য হানাদার বাহিনীর বর্বরতায় শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিতে যাওয়ার পথে রাঙ্গামাটি সিন্দুরঘাটার মৃত সামাদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এবং রাজরামপুরের মৃত মকসেদ চেয়ারম্যান ও রামভদ্রপুরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মৃত কেনান সরকারসহ অন্যান্যদের ষড়যন্ত্রে বাড়াই আখিরা নামক স্থানে তাদের একত্রিত করে হানাদারবাহিনী ব্যাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
অনেক শিশুও মারা যায়। এক বছরের একটি শিশু কন্যাকে তার মৃত মায়ের বুকে স্থান পান করতে দেখেন প্রত্যক্ষদশীরা ।গণহত্যার খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকার লোকজন শহীদদের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দাহ ও দাফন কার্য সম্পন্ন করেন। যাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাদের সেখানে গণকবর দেয়া হয়।
ভারতের বড়াহার মোহনা হাসপাতালের সামনে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ইনচার্জ ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন রনজিত সিংহের অনুমতিক্রমে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ঘটনা স্থলে এসে শিশুটিকে তার মায়ের বুক থেকে উদ্ধার করে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তার জনৈক আত্মীয়র কাছে লালন পালনের জন্য দায়িত্ব দেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অর্থায়নে ১৯৭১ সালে গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়।পরবর্তীতে আরো কিছু নকশা বাড়িয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।