লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গিয়াস উদ্দিন মেম্বার নামে সাবেক এক ইউপি সদস্যের মালিকানাধীন দুটি দোকানঘর জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। এ সময় অন্তসত্ত্বা এক নারীসহ ছয়জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। শনিবার সকালে উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত চার ব্যক্তিক আটক করেছেন। আহতদের মধ্যে অন্ত:সত্বা জানাতুল ফেরদাউস (২৮), খাদিজা বেগম (৭০) ও ফাতেমা বেগমকে (৫০) নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত আরজু বেগম (৪০), কুলসুম বেগম (৩৫) ও মনোয়ারা বেগমকে (৩৪) স্থানীয়ভাব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিন মেম্বার ৮ বছর আগে পূর্ব চরকলাকাপা মৌজার ১১৩০ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ১৫২৫ নং দাগের অন্দরে আরএস ২১৫ নং দাগে স্থানীয় আজাদনগর বাজারের সাড়ে ৯ শতক জমি কিনে দোকানঘর উত্তোলন করে ভাড়া দিয়ে আসছেন। কিন্তু একই খতিয়ানের অন্য জমির মালিক হওয়ার সুবাধে আলকজান্ডার এলাকার আবদুর রহমান গংরা গোপনীয়ভাবে গিয়াস উদ্দিনের চার শতক জমি রেকর্ড করে নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে গত ৮ অক্টোবর গিয়াস উদ্দিন লক্ষ্মীপুর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ওই রেকর্ড সংশাধনের জন্য একটি (এলএসটি) মামলা (নম্বর-১৪১২/২৪) দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। এরই মধ্যে আব্দুর রহমান তার ভাই রানা ও মোঃ নোমানসহ ভাড়াটে লোকজন নিয়ে শনিবার সকালে গিয়াস উদ্দিনের দোকানঘরগুলো দখল করতে যান। এ সময় তারা ভাড়াটিয়াকে দোকানঘর থেকে বের করে দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে।
খবর পেয়ে গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের ছয়জন নারী সদস্য এসে বাধা দেন। এ সময় রহমানসহ তার লোকজন ওই নারীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেন। খবর পেয়ে রামগতি সেনা ক্যাম্পের একদল সদস্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত নোমান, রানা, শাহাদাত ও মতিনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান তারা। গিয়াস উদ্দিন মেম্বার জানান, পারিবারিক কাজে তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকার বাহিরে রয়েছেন। যে কারণে তার দোকানঘর দখলের খবর পেয়ে পরিবারের নারী সদস্যরা ছুঁটে গিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের হাত থেকে সেই নারীরা পর্যন্ত রেহাই পেলেন না।
তিনি বলন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় স্বজনরা আহত ওই নারীদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য আবদুর রহমানের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রামগতি সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোঃ ইয়ামান জানান, সন্ত্রাসি কায়দায় দোকানঘর দখলের খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। এ সময় চারজনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। এ সময় বাজারে আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় বজায় রাখতে বাজার পরিচালনা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের থানায় সোপর্দ করা হবে। হামলা-দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, আটককৃতদের এখনও থানায় সোপর্দ করা হয়নি। তাছাড়া ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযাগ পেলে তদন্ত করে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।