মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস জনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্থ্য বর্তমান দেশের ফুটবলকে বাঁচাতে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষনার দাবী করেছেন গ্রামীন ফুটবল বিপ্লবী জালাল হোসেন লাইজু।
জালাল হোসেন লাইজু একাধারে ক্রীড়ালেখক, গবেষক ও প্রশিক্ষক। কুড়িগ্রাম শহরের দাদামোড় এলাকায় ১৯৫৯ সালের ২৬ জানুয়ারি তার জন্ম। উনার বাবা মরহুম মনির হোসেন চল্লিশের দশকে দাদামোড় এলাকার মাঠ কাপানো খেলোয়াড় এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন।
স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে উনার সংসার, যদিও তারা কেউ এই দেশে থাকেন না। স্ত্রী সন্তানরা সবাই জার্মানিতে থাকেন, শুধু ফুটবলের টানে উনি একাই রয়ে গেছেন এ দেশের মাটিতে।
লাইজু ভাই ছিলেন আশির দশকে জেলা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন। কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কারমাইকেল কলেজে অনার্স পড়ার সময় ভলিবল ও ফুটবল খেলে সাফল্য দেখান এই খেলাপ্রেমী ব্যক্তি।
মাস্টার্স শেষ করে পারি জমান ঢাকায়। সেসময় তিনি একটি পোশাক কারখানার বড় কর্মকর্তার পদে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি ক্রীড়া জগৎসহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করতেন।
এবং সেইসুবাদে পরিচয় ঘটে দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকের সাথে। বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি।
এক পর্যায়ে ঘরের টানে ছুটে আসেন নিজ মাতৃভূমিতে। এলাকার ক্রীড়াঙ্গনে কিছু অবদান রাখার পরিকল্পনা নেন। সমাজে শিশু শ্রম বন্ধ, মাদক মুক্ত, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মুক্ত করতে ঝড়ে পড়া শিশুদের পড়াশুনায় ফিরিয়ে আনা এবং দেশের ফুটবলে ভাল মানের খেলোয়াড় পাঠানোর লক্ষ্যে ‘একটি বল একটি গ্রাম ফুটবলের নগরী কুড়িগ্রাম’ শ্লোগানে নিজ উদ্যোগে কুড়িগ্রাম ফুটবল প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ফুটবল বিপ্লবী জালাল হোসেন লাইজু।
এই স্কুলের মাধ্যমে ফুটবল প্রশিক্ষণ চলছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন বয়সের প্রায় সহস্রাধিক খেলোয়াড় আছে এই স্কুলে। শতাধিক খেলোয়াড় প্রতিদিন নিয়মিত ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কলেজ মাঠে। অর্থ আর নিজস্ব জায়গা না থাকায় অস্থায়ীভাবে বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একটি কক্ষে।
এই স্কুলে খেলতে আসা কিশোর, যুবকরা বই, খাতা-কলমসহ পড়ালেখার খরচও পাচ্ছেন। এমন নানান সহযোগিতার কারণে বাড়ছে খেলোয়াড়ের সংখ্যা। প্রতিদিন বিকেলে কলেজ মাঠে চলে প্রশিক্ষণার্থীদের ফুটবল প্রশিক্ষণ। এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীদের জার্সি, বুটসহ খেলার সরঞ্জামাদিও দেয়া হয়ে থাকে বিনামূল্যে। এই স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবল খেলছে তার হাতে গড়ে তোলা ফুটবলাররা।
এবারের পাইওনিয়ার লীগেও অংশগ্রহণ করেছে জালাল হোসেন লাইজুর গড়ে তোলা এফসি উত্তরবঙ্গ। এখানে সেচ্ছায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন নোমি নোমান, মিলন খান, মাহিন, তুহিনরা। লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী বিক্রমপুর একাদশকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো তৃতীয় বিভাগ লীগে উন্নিত হয়।
শুধু ছেলেদের ফুটবলই নয় মেয়েদের ফুটবলেও অবদান রাখার লক্ষে আসন্ন নারী প্রিমিয়ার লীগেও এফসি উত্তরবঙ্গ নামে টীম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন জালাল হোসেন লাইজু।
করোনা ভাইরাস জনিত কারনে দেশের ফুটবল অঙ্গনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ফুটবল কেন্দ্রীক যাদের জীবন জীবিকা তারা এখন অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত করছে। মফস্বলের প্রান্তিক ক্ষুদে খেলোয়ার, প্রশিক্ষক, সংগঠক ও তাদের পরিবারকে বাঁচাতে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষনার দাবী করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা ফুটবল উন্নয়ন সমিতির সভাপতি গ্রামীন ফুটবল বিপ্লবী জালাল হোসেন লাইজু।
তিনি দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সকলকে ভেদাভেদ ভুলে ফুটবলের মানুষ গুলোকে বাঁচাতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার অনুরোধ করেছেন। তিনি আরো দাবী করেন ফুটবলাররা কখনো সাহায্য চাইতে জানে না, তারা জাতিকে উজ্জীবিত করে। তাদের বাঁচাতে আমাদের স্বেচ্ছায় সহযোগিতার হাত বাড়াতে ।