গোপালগঞ্জ জেলায় দীর্ঘদিনের গলাকাটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে গোপালগঞ্জ সদরসহ আরো কয়েকটি উপজেলায় এই আতঙ্কে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয়ের মাত্রা বেড়েছে। জানা যায়, চন্দ্রদিঘলিয়া, মধুমতি, পাটকেন্দিসহ বিভিন্ন এলাকাতে কম বয়সি বাচ্চাদের গলা কেটে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, গত ২দিন আগে চন্দ্রদিঘলিয়ায় ৬ মাস বয়সী এক বাচ্চাকে গলা কেটে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতককে এলাকাবাসি ধরে ফেলে। কিন্তু খবরটি কতটুকু সত্য সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
এরপরই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গজারিয়াপাড়ায় এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর গলা কেটে হত্যার সঠিক খবর পাওয়া যায়। এই ঘটনায় ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় গত এক সপ্তাহে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
এদিকে হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘ছেলেধরা’, ‘গলাকাটা’ বেরিয়েছে গুজব এবং উপজেলার পরানপুর এলাকা থেকে ছেলেধরা সন্দেহে কুদ্দুস শেখ নামে বোরকা পরিহিত এক বাকপ্রতিবন্ধীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলাজুড়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সরেজমিন উপজেলার ১১১নং সাফলীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস কক্ষে শিক্ষক ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী নেই। শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে।
শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়টিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে গলাকাটা গুজবে উপস্থিতি কমে গেছে। আজ মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এসেছিল। অভিভাবকরা সঙ্গে করে নিয়ে এসে হাজিরা দিয়ে আবার সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।
শিক্ষার্থী নুসরাত খানম, হোসাইন জানায়, গলা কাটার ভয়ে তারা স্কুলে যায় না। অভিভাবকদের সঙ্গে গিয়ে হাজিরা দিয়ে চলে আসে।
অভিভাবক হাফিজুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। গলাকাটা বেরিয়েছে শুনে ভয়ে স্কুলে পাঠাই না। স্কুলে নিয়ে গেলেও আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসি। আমরা অভিভাবকরাও সন্তানদের নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। ঠিকমতো ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছি না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানারা পারভীন বলেন, এক সপ্তাহ আগে এই গ্রামের একটি শিশুকে গলা কেটে হত্যার পর এলাকার ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। অভিভাবকরা দুই-একজনকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেও হাজিরা দিয়ে আবার বাড়িতে নিয়ে যান। ফলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।
কাশিয়ানী থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ছেলেধরা’ এটা একটা গুজব। এসব গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে সন্তান ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।